জাহালমকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তুললেন মা
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর ভুলে প্রায় তিন বছর কারাভোগের পর অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্ত হলেন পাটকল শ্রমিক জাহালম।
হাইকোর্টের আদেশের পর রোববার রাত ১টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে জাহালমকে মুক্তি দেয়া হয়।
মুক্ত হয়ে ভাই শাহনুরকে সঙ্গে নিয়ে ভোরেই গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়ায় পৌঁছান জাহালম। মুক্তির পর জাহালম তার ভাই শাহানুর মিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারাগার থেকে ভাই শাহানূরের সঙ্গে সোমবার ভোররাত ৪টায় গ্রামের বাড়িতে আসেন জাহালম। জাহালমকে দেখে জড়িয়ে ধরে মা মনোয়ারা বেগমও কাঁদতে থাকেন।
মা মনোয়ারা ছেলের কপালে চুমু দিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, ‘কার মাথায় বাড়ি দিছিলাম যে আমার এত বড় সর্বনাশ করছিল।’ এ সময় আহাজারি করেন জাহালমের ভাই-বোন ও স্বজনরাও। পরে কারামুক্ত জাহালমকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তোলেন মা মনোয়ারা।
জাহালমের মা মানোয়ারা বলেন, ‘আল্লাহ তুমাগো (সাংবাদিক) ভালো করুক। শেখের বেটিরে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নেক হায়াত দান করুক। আমার ব্যাটা আমার বুকে ফিরে আইছে আল্লাহর দরবারে সালাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে এই তিন বছরে আমার ব্যাটারে আমি দেহি নাই। যার কারণে আমার ব্যাটা জেল খাটলো। তার বিচার শেখের বেটি যেন করে, তার যনে জেল অয়। আর আমার যে ক্ষতি অইছে ,আমি ঋণী, পাওনাদাররাগো হাত থিকা আমারে আমার সন্তাগোরে যেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) রক্ষা করেন, মুক্তি দেন। আমি তার জন্যে দুয়া করি।’
জাহালমের বড় ভাই শাহানূর মিয়া বলেন, ‘ভাই ছাড়া পাইছে, আমরা সবাই খুশি। আমার ভাইয়ের কারাগারের তিনটি বছর কেউ ফিরিয়ে দিবো না কিন্তু আমাদের পরিবার যে কারণে আজ পথে বসেছে তার কি হবে?’
তিনি সরকারের কাছে ন্যায়বিচার আশা করে বলেন, ‘আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, আমাদের পরিবারকে যেন তিনি দেখেন। তিনি থাকতে আমার বৃদ্ধ মা যেন অন্যের বাড়িতে আর ঝিয়ের কাজ করে খেতে না হয়।’
এ ব্যাপারে জাহালম বলেন, ‘আমারে বিনা অপরাধে ৩ বছর জেল খাটাইলো দুদক। আমর জীবনে ৩টা বছর নষ্ট করে দিল। জেলখানায় খুব কষ্টে দিন কাটাইছি। যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিছে ও যে দুদকের লোকেরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছে আমি তাদের শাস্তি চাই।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই আবেদন তাদের যেন বিচার হয়। যারা আমার মুক্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমার যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতির পূরণ চাই।
এদিকে সোমবার সকাল থেকেই জাহালমকে একনজর দেখতে ভিড় করে গ্রামের মানুষ। ধুবুরিয়া গ্রাম ছাড়াও আশপাশের গ্রামের লোকজনের ঢল নামে জাহালমের বাড়িতে। জাহালম ও তার পরিবারের সদস্যরা অমানবিক এ ঘটনার বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
জাহালম টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়া গ্রামের মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে। জাহালমের তিন ভাই আর তিনি বোন।
সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে বিনা দোষে তিন বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে নরসিংদীর পাটকল শ্রমিক টাঙ্গাইলের সন্তান জাহালমকে। রোববারই সোনালী ব্যাংকের ওই অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে হাইকোর্ট তাকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন। কারাগারে কাগজ পৌঁছানোর পর জেলসুপার তাকে মুক্তি দেন।
এর আগে সকালে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন যে, ‘কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে নয়। এই ভুল তদন্তে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা, সিন্ডিকেট থাকলে কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করে আদালতকে জানাতে হবে। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। এ রকম ভুলের দায় দুদক কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন