তীব্র গরমে জীবন বাঁচাতে পদ্মায় লাফ, নিখোঁজ ২ জনের লাশ শনাক্ত
ফেরিতে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়ার সময় প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের একটি ফেরির শতাধিক যাত্রী। ফেরিটি শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছানো মাত্রই হুড়োহুড়ির থেকে জীবন বাঁচাতে পদ্মায় লাফিয়ে পড়েন যাত্রীরা। একটু স্বস্তির আশায় শতাধিক যাত্রী দীর্ঘ সময় পানিতে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু ঘাটেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১৩ যাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তীব্র গরমে এদিন অপর একটি ফেরির এক যাত্রীসহ মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়। পরে স্বজনরা এসে লাশ শনাক্তের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহতদের মধ্যে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার পদ্মবিল গ্রামের মজিবর রহমান শেখের মেয়ে শিল্পী বেগম (৪০) ও পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার আরামকাঠি গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে মো. শরিফুল ইসলামের (২৬) লাশ বৃহস্পতিবার সকালে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বালীগ্রাম এলাকার আল আমিন বেপারীর স্ত্রী নিপা বেগম (৪০), বরিশালের মুলাদী উপজেলার চর কালেকাং গ্রামের ইসহাক আকন্দের ছেলে মো. নুরু উদ্দিন (৪৫) ও শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলিকা প্রসাদ গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মাববরের ছেলে আনসুর মাদবরের (১৫) লাশ বুধবার হস্তান্তর করা হয়।
জানা যায়, গত কয়েকদিনের মত বুধবারও সকাল থেকেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের ফেরিতে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের ঢল নামে। শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিই ছিল যাত্রীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। যাত্রীদের চাপে ফেরিগুলো যানবাহন না নিয়ে ছেড়ে আসে শিমুলিয়া থেকে। চাপ সামাল দিতে এ দিন বাংলাবাজার ঘাট থেকে অল্প যানবাহন বোঝাই করেই বা খালি ফেরি শিমুলিয়া পাঠানো হয়। সকালে বাংলাবাজার ঘাট থেকে রোরো ফেরি এনায়েতপুরী ১৫টি যানবাহন নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে এসে পৌছায়।
এ সময় ফেরিটি যানবাহন ঘাটে নামানোর আগেই শিমুলিয়া ঘাট থেকে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী ফেরিতে উঠতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যাত্রী বোঝাই করে প্রায় ৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর যাত্রীদের চাপে লোড করা যানবাহন শিমুলিয়া ঘাটে না নামিয়েই যাত্রীবোঝাই ফেরিটি আবার বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। প্রচণ্ড গরমে ফেরিটি মাঝ পদ্মায় যখন পৌছে তখন ফেরিটিতে লুটিয়ে পড়ে অন্তত ২০ জন যাত্রী। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন অনেকেই।
ফেরিতে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা ফেরির অপেক্ষায় শিমুলিয়া ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টার আটকে থাকার পর এই ফেরিটি ঘাটে আসে। তখন ফেরির গাড়ি নামানোর আগেই হাজার হাজার যাত্রী ফেরিতে উঠতে শুরু করে। আমিও কোনোমতে ফেরিতে উঠে এক জায়গায় দাঁড়াই। সকল যাত্রী ওঠার পরও ফেরিটি প্রায় ৩ ঘণ্টা ঘাটে বাঁধা ছিল। যার ফলে ফেরিতে যাত্রীদের গাদাগাদিতে গরমে আমরা ফেরির অনেক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা যারা মোটামুটি সুস্থ ছিলাম তারা পানি ও বাতাস দিয়ে অসুস্থদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। তবুও চারজন মারা গেল। আর পানিতে লাফিয়ে না পড়লে আরও অনেকেই মারা যেত।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজুল হোসেন বলেন, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে এ সকল ফেরি যাত্রীরা মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়েছে। নিহতদের লাশ শনাক্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন