আ’লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের জমি দখলের অভিযোগ

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় কোটি টাকার জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। তারা ৬৫ শতাংশ জমির সামনে ১৬ জনের নাম দিয়ে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন।

এ ঘটনায় জিডি করেও এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন পাল সম্প্রদারের লোকজন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার দশকিয়া ইউনিয়নের খাস মগড়া গ্রামের সংখ্যালঘু সনত পাল, সমীর পাল, অনিমা পাল ও গায়ত্রী পালের মগড়া বাজারে উত্তরপাশে ৬৫ শতাংশ জমির সামনে একটি ছাপড়া ঘর এবং সাইন বোর্ড দেয়া হয়েছে।

সাইনবোর্ডে দশকিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কোরবান আলীসহ আমানত আলী সরকার, সেলিম তালুকদার, মজিবর তালুকদার, আফাজ উদ্দিন ভুইয়া, ইসমাইল হোসেন ভুইয়া, রহিজ উদ্দিন মেম্বার, শফিকুল ইসলাম শফি, দেলোয়ার হোসেন মোল্লা, আনোয়ার হোসেন আকন্দ, মতিয়ার রহমান ভুইয়া মেম্বার, আরিফুল ইসলাম আরিফ, জালাল উদ্দিন দুল্লু, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল কাশেম ও নাজমুল হাসানের নাম রয়েছে। এদের অধিকাংশই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা।

জমি দখলের অভিযোগে এনে সনত পাল বাদী হয়ে কালিহাতী উপজেলাধীন মগড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ জিডি হিসেবে গ্রহণ করেছে।

সংখ্যালঘুরা জানান, দখলকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও দশকিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক ভুইয়ার আত্মীয়-স্বজন।

জিডি করার পরও দেলোয়ার হেসেন, শফিকুল ইসলাম শফি, আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে গভীর রাতে ওই জমিতে মাটি ভরাট করতে যান কয়েকজন। এসময় সনত পাল ও সমীর পাল মাটি ভরাটে বাঁধা দিলে তাদের খুন করার হুমকি দেয়া হয়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলে দখলকারীরা পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা জানান, ওই জমি দখল করার উদ্দেশ্যেই গভীর রাতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ও টিন দিয়ে ছাপড়া ঘর তুলেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

সনত পাল বলেন, আমাদের জায়গা নিতেই তারা বিভিন্ন প্রকার হুমকি, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে মারতে আসে।

তিনি বলেন, মামলা তুলে নেয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বলে- ‘মালুর বাচ্চারা, যদি এ দেশে থাকতে চাস তাহলে মামলা তুলে মীমাংসা কর। আমরা এখন খুব আতঙ্কে আছি। ওরা খুবই শক্তিশালী।’

দশকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এমএ মালেক ভুইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলে সনত পালের ভাতিজা প্রদীপ পালের জমি কিনে নিয়েছে। রাতে মাটি ভরাটের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সনত পালকে মীমাংসা করার জন্যে আমি ডেকেছিলাম।

অভিযুক্ত দশকিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কোরবান আলী মেম্বার বলেন, ওই জমির বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না। তবে দেলোয়ার ও শফি ওরাই ভালো বলতে পারবে।

রহিজ উদ্দিন মেম্বার বলেন, ওই সাইনবোর্ডে আমার নাম লেখা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু ওই জমির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রদীপ পালের নিকট থেকে আলম তালুকদার ৬৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছে। আমরা আলম তালুকদারের নিকট থেকে ক্রয় করেছি।

টাঙ্গাইল কাগমারী এলাকার জবেদা আলীর ছেলে আলম তালুকদার বলেন, সনত পালের ভাতিজা প্রদীপ পালের নিকট আমার ৩০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। টাকা না দিতে পারায় প্রদীপ পালের ৬৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছি। প্রদীপ পাল তার ওয়ারিশের জমি আমার কাছে বিক্রি করেছে। শফিকুল ইসলাম শফি ৩ শতাংশসহ ১১ শতাংশ জমি আমার কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়েছে। বাকি জমি ওরা বায়নাপত্র করেছে। কালিহাতীর মগড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই জমিতে গভীর রাতে শফিকুল ইসলাম শফির নেতৃত্বে মাটি ভরাট করতে যায়। পরে আমরা গিয়ে মাটি ভরাট বন্ধ করে দেই। এ বিষয়ে একটি জিডি করা হয়েছে। সূত্র : পরিবর্তন ডটকম