কূটনীতিকদের অভিযোগ নিয়ে শক্ত অবস্থানে পাক-ভারত

ভারত ও পাকিস্তান নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদে তাদের কূটনৈতিক স্টাফদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ করেছে। পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কে আরো অবনতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানি কূটনীতিকদের কথিত হয়রানি নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার ভারতে নিযুক্ত হাই কমিশনার সোহেল মাহমুদকে ডেকে নেয়।

পাকিস্তান তার কূটনৈতিক স্টাফ ও তাদের পরিবার সদস্যদের হয়রানি করার প্রায় অর্ধ ডজন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেছে। এমনকি শিশুদের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বলে পাকিস্তান জানিয়েছে। আর নয়া দিল্লি বলেছে, গত আট মাস ধরে তাদের কূটনীতিকদের নিয়মিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্কুল থেকে ফেরার পথে এক সিনিয়র কূটনীতিকের সন্তানকে বহন করা একটি গাড়িকে অপর একটি গাড়ি অনুসরণ করে। পাকিস্তান জানিয়েছে, গত ৯ মার্চ পাকিস্তান নৌবাহিনী উপদেষ্টার গাড়িকে ‘আগ্রাসীভাবে ধাওয়া’ করা হয়।

পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনায় নয়, পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বিশেষ করে পাকিস্তানি কর্মকর্তা ও স্টাফদের সন্তানদের টার্গেট করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের এক কূটনীতিকের প্রকাশিত একটি ফুটেজে দেখা গেছে, তার গাড়িকে অনুসরণ করছে কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার বৃহস্পতিবার বলেছেন, কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানি অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে। তবে তিনি বলেন, ভারতের অভিযোগগুলো মাসের পর মাস অমীমাংসিতই থেকে গেছে।

তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তানি অভিযোগগুলো দেখেছি। তবে মিডিয়ার মাধ্যমে নয়, যথাযথ কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে এসবের জবাব দেওয়া হবে।

রাভিশ কুমার বিস্তারিত না বললেও ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কর্মীরা ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনেরর কাছে নির্মাণাধীন ভারতীয় আবাসিক কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়েছে। ভবনটির পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে বলেও খবরে প্রকাশ। অনুপ্রবেশকারীরা এক ভারতীয় কূটনীতিকের বাড়িতে ঢুকে একটি ল্যাপটপ চুরি করেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে কূটনীতিকদের হয়রানির খবর নতুন কিছু নয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরস্পরের কূটনীতিকদের ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারিতে রাখে। ইসলামাবাদ ত্যাগ করতে হলে ভারতীয় কূটনীতিকদের অনুমতির প্রয়োজন হয়, দিল্লি থেকে অন্যত্র যেতে হলে পাকিস্তানি কূটনীতিকদেরও অনুমতি লাগে।

সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশ তাদের কূটনীতিকদের বহিষ্কারও করেছে। ‘ভারতবিরোধী তৎপরতা চালানোর’ অভিযোগে ২০১৬ সালে পাকিস্তানি হাই কমিশনের সদস্য মেহমুদ আখতারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। এর জের ধরে উভয় দেশ পাঁচজন করে কূটনীতিক বহিষ্কার করেছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন ঘটনায় তাদের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাবেক ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব ললিত মানসিং বলেন, পাকিস্তানে মনে করা হয়ে থাকে, তাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের তহবিল কমাচ্ছে। ভারত ক্রমাগত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়ছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার অবনতিশীল কূটনীতিক সম্পর্কের আলামত এটি।

তিনি বলেন, কূটনীতিকদের হয়রানি নতুন কিছু নয়। ভারতীয় কূটনীতিকদের অনুসরণ করে আইএসআই। আমি নিশ্চিত, আমরাও তাদের ওপর নজরদারি করি। তবে এগুলোকে আনুষ্ঠানিক ইস্যু বানানোর অর্থ হলো তারা জানিয়ে দিতে চাচ্ছে, সম্পর্ক ভালো অবস্থায় নেই।