ঘুড়ি উড়াতে না দেয়ায় বাবা-মা-বোনকে হত্যা

কলেজ ফাঁকি দেওয়া, পড়াশোনা না করা, আড্ডা দেওয়া, পরীক্ষায় ফেল করার মতো প্রায় সব বাজে কাজই করত সে। এসব নিয়ে বাড়িতে অশান্তি হচ্ছিল। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছিল ঘুড়ি উড়ানো। সে কারণে বকাঝকা করেছিল বাবা-মা।

কিন্তু প্রতিদিন বাবা-মায়ের এই শাসন অসহ্য লাগছিল। শেষ পর্যন্ত মা-বাবার সঙ্গে বোনকেও চরম শিক্ষা দিল এক কলেজ শিক্ষার্থী। পর পর ছুরি চালিয়ে নৃশংসভাবে খুন করল তিনজনকেই। রোমহর্ষক এই ঘটনা ঘটেছে দিল্লির বসন্তকুঞ্জ এলাকায়।

ঘটনাটি ১৪ অাগস্টের হলেও প্রকাশ্যে এসেছে গত বুধবার। উনিশ বছর বয়সী সুরজ বর্মাকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর এ বিষয়টি সামনে আসে। পুলিশের দাবি, জেরায় তিনজনকে খুনের কথা স্বীকার করেছে সুরাজ। সে এটাও জানিয়েছে যে, প্রতিনিয়ত মা-বাবার বকুনিতে বিরক্ত হয়েই তিনজনকে খুন করেছে সে।

কিন্তু, পরিবারের তিনজনকে খুন করার পরও গ্রেফতার করতে পুলিশের এতদিন কেন লাগল? তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, তিন খুনের আগে পরে এমনভাবে পটভূমি তৈরি করেছিল, যে সুরজের দিকে সন্দেহ হলেও সূত্র মিলছিল না। অবশেষে টানা জেরায় ভেঙে পড়ার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সূত্র বলছে, গত ১৫ অাগস্ট ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে বকাবকি করেন সুরজের বাবা-মা। বিকেলের দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। স্থানীয় দোকান থেকে ছুরি ও কাঁচি কিনে আনে। এরপর অনেক রাত পর্যন্ত মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটায়। তাদের সঙ্গে গল্প করা, সেলফি তোলা, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে। তারপর সবাই ঘুমাতে যায়।

এর পর ভোর তিনটে নাগাদ সুরজ ঘুম থেকে উঠে মা-বাবার ঘরে যায়। সেখানে প্রথমে তার বাবা মিথিলেশ বর্মাকে পর পর ছুরি চালিয়ে আক্রমণ করতে থাকে। ৪৪ বার ছুরি চালায় সে। ঘুম ভেঙে যায় মা সিয়া দেবীর। তাকেও একই ভাবে আক্রমণ করে সুরজ। এরপর বোনের ঘরে গিয়ে তার গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়। পুলিশের দাবি, বোনকে খুন করার সময়ও মা বেঁচে ছিলেন এবং তিনি মেয়েকে বাঁচানোরও চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বোনকেও পর পর ছুরি মেরে খুন করে সুরজ।

নিজেরই বাবা-মা ও বোনকে খুনের পর ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো করে ছড়িয়ে দেয়। ছুরি ও নিজের গায়ে রক্তের দাগ বাথরুমে গিয়ে ধুয়ে ফেলে সে। এর পর ঘণ্টা দুয়েক পর প্রতিবেশীদের ডেকে ডাকাতি হয়েছে বলে জানায়। এই গল্পটাকে বিশ্বাস করাতে নিজের হাতেও ক্ষতচিহ্ন তৈরি করে সুরজ।

তিনজন খুন হলেও একজনের হাতে সামান্য চোট। পাশাপাশি বাড়ির জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড থাকলেও কিছুই খোয়া না যাওয়ায় পুলিশের সন্দেহ হয়। তবে কোনও প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কিন্তু ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা তদন্তে গিয়ে বুঝতে পারেন, ছুরি থেকে দাগ ধোয়া হয়েছে। তারপরই সুরজকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুরো ঘটনা জানা যায়।

পুলিশ সূত্র বলছে, এর আগেও সুরজ একবার নিজেকে অপহরণের গল্প ফেঁদেছিল। সেবার পুলিশি জেরায় পরে সে কথা স্বীকারও করেছিল। এবারও শেষ রক্ষা হলো না।