নিজের বাড়ি ক্লিনিক বানিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন নার্স

সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স বর্তমানে ডেপুটেশনে কর্মরত নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ফাতেমা খাতুন সদর উপজেলার রামগাঁতী গ্রামে তার বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন একটি মিনি ক্লিনিক।

তিনি নানা কৌশলে হাসপাতাল থেকে এবং গ্রামাঞ্চল থেকে পিসির ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করে তাদেরকে দিয়ে নারী রোগী বাগিয়ে এনে তিনি চিকিৎসক না হয়েও তার বাড়িতে চিকিৎসা সেবার নামে করছেন অপ-চিকিৎসা। আর যার কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেক রোগীকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে ছোট খাটো দুর্ঘটনাসহ প্রাণও দিতে হয়েছে। এমনই একটি ঘটনার শিকার হয়ে গত বুধবার রাতে ডেলিভারি করতে আসা কামারখন্দ উপজেলার নুন নগর গ্রামের রহিদুল ইসলামের স্ত্রী সামিনা খাতুনকে (২৫) নার্স ফাতেমা খাতুনের অপচিকিৎসায় প্রাণ দিতে হলো।

জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় কামারখন্দ উপজেলার নুন নগর গ্রামের রহিদুল ইসলামের স্ত্রী সামিনা খাতুন (২৫) ডেলভারি করতে নার্স ফাতেমার বাড়িতে আসে। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নার্স ফাতেমা ওই রোগীকে সাইড কেটে ডেলিভারি করান। এসময় একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পরে বেগতিক দেখে নার্স ফাতেমা রাত সাড়ে ৯টার দিকে রোগীকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে রাত পৌনে ১০টার দিকে রোগী সামিনা খাতুন মারা যান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নার্স ফাতেমা চিকিৎসক না হয়েও দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ তার বাড়িতে মিনি ক্লিনিক খুলে অবৈধ গর্ভপাতসহ গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল নারীদেরকে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারিত করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

সামিনা খাতুনের প্রাণহানির সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে নার্স ফাতেমা খাতুনের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মহিলা রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ভিড় করছেন।

এদের মধ্যে কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল থেকে আসা এক রোগীর অভিভাবক জানান, কিছুদিন আগে তিনি আছিয়া খাতুন নামের এক আত্মীয়কে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে এখান থেকে ডেলিভারি করে নিয়ে গেছেন। আজ নিজেই তার কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এভাবেই তার মতো আগত অন্যান্য রোগীরাও নার্স ফাতেমার কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছে বলে অকপটে স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে নার্স ফাতেমা খাতুন ওই রোগীকে ডেলিভারি করানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ওই রোগীটি আমার আত্মীয় হয়। সেই সূত্র ধরেই তারা আমার কাছে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিতে আসে। আমি এর আগেও ওই পরিবারের বেশ কয়েকজনকে ডেলিভারি করিয়েছি। তবে এ রোগীটি কি কারণে মারা গেল তা বুঝতে পারলাম না।

তিনি বলেন, আমার কাছে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসলে আমি নরমাল ডেলিভারিসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তবে জটিল কিছু হলে আমি ওইসব রোগীকে প্রাইম হসপিটালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেই। কারণ সেখানে চিকিৎসার মান ভালো হয়।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ও সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. আকরামুজ্জামান জানান, ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। হাসপাতাল থেকে আমাকে জানানো হয় সামিনা খাতুন (২৫) নামের ডেলিভারির একটি রোগী রাত ৯টা ২০ মিনিটে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। ওই সময় ডা. শামীম রোগীটির পালস পায়নি। তারপরেও রোগীটিকে গাইনী ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে রোগীটির মৃত্যুর বিষয়টি ডা. ফারহানা নিশ্চিত করেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালের সেবিকা হয়ে ফাতেমা খাতুন তার বাড়িতে এভাবে চিকিৎসালয় খোলা তো দূরের কথা তার চিকিৎসা দেয়ারও কোনো এখতিয়ার নেই। এটা অনুচিৎ। তবে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।