বাবা মেরেছেন চড়, ক্ষিপ্ত হয়ে সন্তানকে শীতলক্ষ্যায় নিক্ষেপ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ছয় বছরের শিশু সিয়াম অপহরণ ও হত্যার ঘটনার ‘মূলহোতা’ মো. মিঠু মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাবের দাবি, চার মাস আগে নিহত শিশু সিয়ামের বাবা মোফাজ্জল হোসেনের ইটের ট্রলিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন আসামি মিঠু মিয়া (২৬)। মিঠু তাদের বাসাতেই থাকতেন। সেখানেই তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

কাজ শুরুর ১৫/১৬ দিন পর মিঠুর সঙ্গে হৃদয় নামে অপর এক শ্রমিকের ঝগড়া হয়। এটি সমাধানে মালিক মোফাজ্জল মিঠুকে চড়-থাপ্পড় ও বকাবকি করেন। ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হন মিঠু মিয়া।

প্রতিশোধ নিতে মালিকের শিশুসন্তান সিয়ামকে (৬) বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মিঠু কাঞ্চনব্রিজের ওপর থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব-১ এর কার‌্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-৩) পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানাধীন গন্ধবপুর এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে শিশু সিয়ামের অপহরণকারী ও খুনিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা।

মিঠুকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে নির্মম ওই খুনের ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘাতক ধরা পড়লেও শিশু সিয়ামের মরদেহ এখনও উদ্ধার করতে পারেননি পুলিশ, র‌্যাব কিংবা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিরাব খালপাড়ের বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেনের ছয় বছরের শিশু সন্তান সিয়াম নিখোঁজ হয়। সিয়াম বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

সিয়াম নিখোঁজের পর শ্রমিক মিঠু পালিয়ে যান। ১৭ সেপ্টেম্বর সিয়ামের মা ফারজানা বাদী হয়ে পলাতক শ্রমিক মিঠু এবং তার বাবা আনোয়ারসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন।

র‌্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-৩) পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, চার মাস আগে আসামি মিঠু মিয়া ভুক্তভোগী সিয়ামের বাবার ইটের ট্রলিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। মিঠু মোফাজ্জলের বাসাতেই থাকতেন। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করতেন। কাজে যোগদানের ১৫/১৬ দিন পর হৃদয় নামে অন্য এক শ্রমিক সঙ্গে মিঠুর ঝগড়া হয়। ওই ঘটনায় মিঠুর দোষ থাকায় মোফাজ্জল তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে মিঠু ক্ষিপ্ত হয়ে সিয়ামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে মোফাজ্জলের ছেলে সিয়ামকে রূপগঞ্জের কাঞ্চনব্রিজে ঘুরতে নিয়ে যায় মিঠু। সেখানে সন্ধ্যা নেমে এলে একপর‌্যায় ব্রিজের রেলিং থেকে ধাক্কা দিয়ে শিশু সিয়ামকে শীতলক্ষ্যা নদীতর ফেলে দেয় সে। এরপর সেখান থেকে ঘাতক মিঠু পালিয়ে তার নিজ বাড়ি গন্ধবপুরে চলে যায়।

তিনি বলেন, শিশু সিয়ামের নিখোঁজের বিষয়টি ওই সময় ব্যাপক আলোচিত হয়। সে সময় আসামি মিঠু ও তার পরিবারের সব সদস্য নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন আরও জানান, গ্রেফতারের পর আসামি মিঠু সিয়াম হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। মিঠু জানায়, মোফাজ্জল হোসেন তাকে চড়-থাপ্পড় ও গালাগালি করেন। এর প্রতিশোধ নিতে শিশু সিয়ামকে ব্রিজ থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করেন।

‘যদিও এখন পর্যন্ত শিশু সিয়ামের মরদেহ পাওয়া যায়নি। আমরা আসামি মিঠুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে সে বিষয়টি স্বীকার করে’- বলেন র‌্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী সিয়ামের মা ফারজানা বলেন, বাসা থেকে মিঠু আমার সন্তাকে নিয়ে যায়, তারপর সন্ধ্যা হয়, রাত হয় কিন্তু সিয়াম আসে না। আমি ও আমার স্বামী বিভিন্ন স্থানে সিয়ামের খোঁজাখুঁজি করি কিন্তু কোথাও পাইনি। পরে একদিন মিঠু ফোন করে বলে, তোর ছেলেকে ফেলে দিয়েছি। এরপর থানায় গিয়ে অপহরণের মামলা করি।

তিনি বলেন, ‘যাকে আমরা খাওয়াইছি, থাকার জায়গা দিয়েছি; সেই আমার আদরের নিষ্পাপ শিশুসন্তানকে এমনভাবে হত্যা করেছে, আমি এর বিচার চাই।’