মিয়ানমারে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের সাজা আপিলেও বহাল

মিয়ানমারে তথাকথিত রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগ এনে সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।

শুক্রবার দেশটির হাইকোর্টের বিচারক অং নাইং এ আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ডই বহাল থাকল।

রায়ে বিচারক অং নাইং বলেন, নিজেদের নির্দোষ দাবির পক্ষে তারা যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটি তাদের জন্য উপযুক্ত শাস্তি।

তিনি বলেন, দুই সাংবাদিক ‘জার্নালিস্টিক ইথিকস’ মেনে চলেননি। তাদের ফাঁদে ফেলে গ্রেফতার করার বিষয়টি আদালত নিশ্চিত হতে পারেনি।

তবে এ রায়ের বিপক্ষে তারা সুপ্রিমকোর্টে আপিল করতে পারবেন।

রায়ের পর রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টেফেন এক বিবৃতিতে বলেন, কো ওয়া লোন ও কায়াও সোয়ে এর ওপর যেসব নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, আজকের রায় সেসব অন্যায়ের একটি। তারা এখনও গরাদের পেছনে থাকার একটিই কারণ- যারা ক্ষমতায় আছে তারা সত্যের মুখ বন্ধ করতে চাইছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, সংবাদ সংগ্রহ করা অপরাধ নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমার এই ভয়ঙ্কর ভুল শুধরে না নেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশটিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আসবে না। মিয়ানমার আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র চর্চার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেটা নিয়েও সন্দেহ থেকে যাবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিম্মআদালত এই মামলা ভুলভাবে উপস্থাপন করে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের দায় দুই সাংবাদিকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

স্টেফেন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং তা মিয়ানমারের শত্রুদের কাছে পাচার করে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এ বিষয়ে সরকার পক্ষে আইনজীবী খিনে খিনে সোয়ে বলেন, আপিলের শুনানির সময় দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গোপন নথি সংগ্রহ এবং তা নিজেদের কাছে রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।

গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ইয়াঙ্গুনের জেলা জজ আদালত দুই সাংবাদিক কো ওয়া লোন (৩২) ও কায়াও সোয়ে (২৮) কে দোষীসাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়।

ইয়াঙ্গুনের জেলা জজ আদালতের ওই রায়ের পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন মিয়ানমারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

উল্লেখ্য, কো ওয়া লোন ও কায়াও সোয়ে ও নামে এ দুই সাংবাদিককে গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ইয়াঙ্গনের উপকণ্ঠে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদেরকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন নিয়ে তারা কিছু দলিল জোগাড় করেছিলেন। সে জন্য তাদের অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে গ্রেফতার করা হয়। দুজনই মিয়ানমারের নাগরিক। দুই সাংবাদিক বলেছেন, তারা কোনো ভুল করেননি।

রয়টার্স জানায়, তাদের দুই রিপোর্টারকে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ডিনারের কথা বলে ডেকে নিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এর পর তাদের বিরুদ্ধে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টয়ের আওতায় অভিযোগ করা হয়।

১৯২৩ সালে প্রণীত ওই আইনের আওতায় আটক ব্যক্তি দোষি সাব্যস্ত হলে তার ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে দেশটিতে।