মোদির ছাড়পত্র, যুদ্ধ হলে দুই সপ্তাহেই শেষ হবে ভারতের গোলাবারুদ

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ সেনা নিহতের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছেন, পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে সামরিক বাহিনীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, সামরিক বাহিনীর সে সক্ষমতা আছে তো?

বৃহস্পতিবারের ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন জইশ-ই-মুহম্মাদ। এরপর থেকেই পাকিস্তানকে তুলাধুনো করছে ভারত। এমনকি দেশটিকে বিশ্ব থেকে একঘরে করতে সব ধরনের ব্যবস্থা করার হুমকি দিয়েছে নয়াদিল্লি। যদিও পাকিস্তান বলছে, ওই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, সার্জিকাল স্ট্রাইক-এ সেনাবাহিনীর সাফল্য নিয়ে মোদি সরকার ঢাক পিটিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান ও প্রয়োজনে চীনকে একসঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা সেনাবাহিনী বা বিমানবাহিনীর রয়েছে কি না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন রয়েছে।

এর আগে উরিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের হামলা এবং ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর পর সেনাবাহিনীকে জরুরি ভিত্তিতে ট্যাংক-ঘাতক ক্ষেপণাস্ত্র, রাইফেল, গোলাবারুদ ইত্যাদি কিনতে হয়েছিল। কিন্তু তার দাম মেটাতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঁড়ে মা ভবানী।

গত বছর সেনাবাহিনীর উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল সরথ চাঁদ সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর শতকরা ৬৮ ভাগ অস্ত্রশস্ত্রই ‘ভিন্টেজ’। মাত্র ৮ শতাংশ অস্ত্রশস্ত্র অত্যাধুনিক। ২৪ শতাংশ অস্ত্রশস্ত্রকে নতুন বলা চলে। তা সত্ত্বেও মোদি সরকারের থেকে টাকা মিলছে না। সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের নামে যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, তার থেকে বেশি টাকা লাগবে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র কিনতে।

২০০১ সালে সংসদে আজমাল কাসাবদের হামলার পর তৎকালীন বাজপেয়ী সরকার নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিপুল সংখ্যায় সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ৫ লক্ষ জওয়ান, তিনটি ট্যাংক-সজ্জিত ডিভিশন ও তাদের সঙ্গে স্ট্রাইক কোর মোতায়েন করতে তিন মাস সময় লেগে যায়। ততো দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখার উল্টো দিকে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে ফেলেছে। সেই ‘অপারেশন পরাক্রম’এ ১০ মাস পর সেনা প্রত্যাহার করতে হয়।

এর পরই ‘কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিন’ অর্থাৎ সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখায় দ্রুত সেনা মোতায়েনের রণকৌশল তৈরি করে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়ত আগেই জানিয়েছেন, সেই নীতি মেনে এখন ৮ থেকে ১০ হাজার সেনা, কামান, ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, ঘাতক হেলিকপ্টার নিয়ে আট থেকে দশটি ‘ইন্টিগ্রেটেড ব্যাটল গ্রুপ’ বা ‘আইবিজি’ তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু তার জন্য আরও অর্থ দরকার।

সেনা সূত্রের বক্তব্য, যথেষ্ট যুদ্ধের ট্যাংক নেই। স্বয়ংচালিত কামান, আকাশ হামলা থেকে ট্যাংক বাহিনীকে রক্ষা করার জন্য ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’-এর অভাব। আর পুরো দমে যুদ্ধ হলে দুই সপ্তাহের আগেই গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাবে।

বিমানবাহনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বীরেন্দ্র সিংহ ধানোয়া বলেছেন, অনুমোদিত ৪২ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমানের মধ্যে মাত্র ৩১ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান রয়েছে। এস-৪০০, রাফাল যুদ্ধবিমান এলে ঘাটতি কিছুটা মিটবে। কিন্তু ৪২ স্কোয়াড্রনও পাকিস্তান ও চীনকে একসঙ্গে টক্কর দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়।