যে কারণে বেনজির ভুট্টো ডটার অব পাকিস্তান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো তার অদৃষ্টের বোধ দ্বারা কতটা তাড়িত ছিলেন ও কতটা তার জীবনের বিশেষ পরিস্থিতি থেকে সৃষ্ট ছিলেন- সে প্রশ্নের জবাব ঐতিহাসিকরাই খুঁজবেন। কিন্তু তার জীবনের কোনো গল্পের সমাপ্তি টানতে হলে বলতে হবে তিনি তার ভাগ্যের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে রাখতে পেরেছিলেন।

এমনকি তিনি যখন তার জীবনের অদ্ভুত ও কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যখন প্রতিদিনের বাস্তবতা তার জীবনের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছিল, তখনও নিজের ভাগ্যকে হতাশ হতে দেননি তিনি।

বেনজির ভুট্টো প্রথমে নিজেকে ডটার অব পাকিস্তান বা পাকিস্তানের কন্যা বলে ডাকেন। পরে ডটার অব ইস্ট। তবে সম্প্রতি তাকে ভাগ্যের কন্যা বলেও ডাকা হচ্ছে। এতে কীভাবে জীবনের চেয়ে বড় হওয়ার ধারণা তার জীবনকে বদলে দিয়েছে- সে সম্পর্কে নির্ভুল আভাস পাওয়া যায়।

যখন তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে গণতন্ত্রকে বিজয়ী করাই ছিল লক্ষ্য, তখন তা পূর্বের প্রতিটি নারীর সফলতার প্রতীক হিসেবেই কাজ করেছে।

সর্বশেষ তার ব্যক্তিগত প্রতীকবাদের রূপান্তর ঘটার সময় তিনি ভাগ্যের মানবমূর্তির মতো দাঁড়িয়েছিলেন, যা অস্পষ্ট ও অসংজ্ঞায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে।

তবে সবচেয়ে ব্যথাতুর ঘটনা হচ্ছে, এই অদৃষ্টের কন্যার সর্বশেষ উপাধির সফলতা কিংবা ব্যর্থতা যাচাইয়ের আগেই তিনি নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। কিন্তু এখান থেকেই আসলে নির্ধারিত হয়েছে, তার ভাগ্যে আসলে কী ছিল।

নিজের ভাগ্যের এক দীর্ঘ পথরেখা তিনি রেখে গেছেন। তার রেখে যাওয়া তথ্যপ্রমাণে এমনটিই পরিষ্কার হয় যে, পাকিস্তানের সামরিক শাসনের পতন ঘটিয়ে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদকে পরাস্ত করাই ছিল তার ভাগ্য। সে ক্ষেত্রে তিনি সফল নাকি ব্যর্থ সেটি দীর্ঘ বিতর্কের বিষয়।

তবে বেনজির ভুট্টো নিজেকে পাকিস্তানের কন্যা বা ডটার অব পাকিস্তান বলে আখ্যা দিয়েছেন ইন্দিরা গান্ধীকে অনুসরণ করে। ইন্দিরা গান্ধীকে ডটার অব ইন্ডিয়া নামে ডাকা হতো। যদিও তাদের রাজনৈতিক জীবন ও পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।

বেনজির ও ইন্দিরার বাবারা ছিলেন উজ্জ্বল রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী। সেই পথ ধরেই তাদের রাজনীতিতে পা রাখা।

কাজেই শৈশব থেকেই রাজনীতিতে তাদের সুপার হিউম্যান চরিত্রের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। সেদিক বিবেচনায় ডটার অব ইন্ডিয়া ভালোই করেছেন। ডটার অব পাকিস্তানও সফলতার পথে ছিলেন।

তারা একদিকে যেমন তাদের বাবাদের কন্যা, অন্যদিকে নিজেদের মাতৃভূমিরও মেয়ে।

সফলতার উচ্চতায় ইন্দিরা গান্ধী তার দেশের সমর্থক হয়ে গেছেন। ইন্ডিয়া হচ্ছে ইন্দিরা, ইন্দিরা হচ্ছে ইন্ডিয়া। এর পর বেনজির ভুট্টোর সফল নেতৃত্বে তার দল জেগে উঠেছিল। দেশের অধিকাংশ লোক তার সমর্থনে ছিল। এভাবে তিনিও পাকিস্তানের উপনামে পরিণত হয়েছিলেন।