রোহিঙ্গাদের গণকবর মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে মিয়ানমার

রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার সব প্রমাণ নষ্ট করতে বুলডোজার দিয়ে রোহিঙ্গাদের গণকবর নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। দেশটির মানবাধিকারকর্মীদের বরাতে গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’।

এদিকে মিয়ানমার সঙ্কটের কারণ হিসেবে দেশটিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক প্রচারণা থেকে তৈরি সামাজিক ‘বিদ্বেষ’কে দায়ী করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশ করা সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

‘দ্য আরাকান প্রজেক্ট’ নামের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও গার্ডিয়ানকে সরবরাহ করে বলে প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়। তারা জানায়, এরই মধ্যে রাখাইনে তিনটি গণকবর বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশে কেন্দ্র থেকে এসব ভারী যন্ত্রপাতি রাখাইনের বুথিডং ও মং নু এলাকায় পাঠানো হয়েছে।

রয়টার্স এবং এপির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যার প্রমাণ পাওয়ার কদিন যেতে না যেতেই এবার সেসব আলামত নষ্টের অভিযোগ পাওয়া গেল।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ওপর তথ্যচিত্র নিয়ে কাজ করছে ‘দ্য আরাকান প্রজেক্ট’। ভিডিও ফুটেজে জঙ্গল নিশ্চিহ্ন করে ফেলা ও গণকবর গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। অর্ধেক মাটিচাপা দেওয়া ত্রিপল ব্যাগে মানুষের গলিত পা দেখা গেছে ওই ভিডিওতে।

‘দ্য আরাকান প্রজেক্ট’-এর প্রকল্প পরিচালক ক্রিস লিউয়া বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে গণহত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এখন গণহত্যার প্রমাণ স্থায়ীভাবে নষ্ট করতে বুলডোজার চালাতে দেখা যাচ্ছে। মিডিয়াতে যে দুটি গণকবরের খবর এসেছে তার মধ্যে গত ১৫ ফেব্র“য়ারি একটি গণকবরের ওপর বুলডোজার চালানো হয়েছে। এর অর্থ, সেখানে গণহত্যার সব প্রমাণ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

লিউয়া জানান, বুলডোজার চালানোর কাজটি করছে মিয়ানমারের একটি বেসরকারি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি রাখাইনের নয়, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চল থেকে এসে তারা এ কাজ করছে। উত্তর রাখাইনের বুথিডং শহরতলির মং নুতে গণকবরটি ছিল। গত বছরের আগস্ট মাসে এ গণহত্যা চালানো হয়।

তিনি বলেন, ‘এটি থেকে স্পষ্ট যে সরকারি আদেশেই গণহত্যার চিহ্ন মুছে ফেলা হচ্ছে।’

গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনের অন্যান্য অংশে বুলডোজার চালিয়ে সমান করে ফেলা হয়েছে। আকাশ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, আগে যেখানে রোহিঙ্গাদের গ্রাম ছিল সেগুলো পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

লিউয়া বলেছেন, ‘শুধু যে বাড়িগুলো পোড়ানো হয়েছিল সেগুলোই নয়, সেখানে পরিত্যক্ত সব বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’