অবশেষে মহাকাশে উৎক্ষেপণ হলো দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট

অবশেষে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হলো বাংলাদেশের প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ বা ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’। এখন এটি অবস্থান করছে মহাশূন্যে।

রোববার (৪ জুন) বাংলাদেশ সময় ভোর ৩টা ৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটেলাইটটির সফল উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটে চড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

ব্র্যাক অন্বেষার তিন তরুণ নির্মাতার একজন রায়হানা শামস্‌ গণমাধ্যমকে বলছেন, আইএসএসে অবস্থানরত নভোচারীরা দুই দিনের মধ্যেই বাংলাদেশি স্যাটেলাইটবাহী কার্গো মহাকাশযানটি পেয়ে যাবেন। এরপর তারা এটিকে কক্ষপথে পাঠানোর সময় নির্ধারণ করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আইএসএসগামী ‘ড্রাগন’ কার্গো মহাকাশযানটি সব মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার পাউন্ড বা অন্তত ২ হাজার ৭২১ কেজি পরিমাণ প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে গেছে।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২ জুন ব্র্যাক অন্বেষার উৎক্ষেপণের কথা ছিল। সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন ছিল। কিন্তু উৎক্ষেপণের ঠিক আগ মুহূর্তে বজ্রপাতসহ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ওই দিনের পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়।

ব্র্যাক অন্বেষার নির্মাতা দলের আরেক সদস্য আবদুল্লা হিল কাফি বলেন, ‘আইএসএসের নভোচারীদের জন্য পৃথিবী থেকে ছয় মাস পরপর রসদ পাঠাতে হয়। এ জন্য সেখানে কার্গো মিশন যায়। আমাদের তৈরি ন্যানো স্যাটেলাইটটি এবারের কার্গো মিশনের অংশ হয়েছে।’

বাংলাদেশি ন্যানো স্যাটেলাইটটির নকশা তৈরি, উপকরণ সংগ্রহ ও নির্মাণ—সব কাজের কৃতিত্বের দাবিদার তিন তরুণ। এরা হলেন- রায়হানা শামস্ ইসলাম, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ার। তিনজনই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক। এখন জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (কিউটেক) স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী। সেখানে তাদের পড়ার বিষয়ও এই ন্যানো স্যাটেলাইট। সেই পাঠের অংশ হিসেবে কিউটেকের একটি প্রকল্পের আওতায় স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণকাজে অংশ নেন। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্ত রয়েছে ঘানা, মঙ্গোলিয়া, নাইজেরিয়া ও স্বাগতিক দেশ জাপান।

ব্র্যাক অন্বেষার নির্মাণে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় অর্থায়ন করেছে এবং কিউটেক শিক্ষা ও প্রযুক্তি সহায়তা দিয়েছে। এটি দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় ১০ সেন্টিমিটার করে। আর ওজনে প্রায় এক কেজি। এই কৃত্রিম উপগ্রহের গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন বা ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণের স্থান ঢাকায় অবস্থিত। তাই কক্ষপথে যখনই এটি পৌঁছাবে, তখন থেকেই ঢাকায় বার্তা গ্রহণ শুরু হয়ে যাবে।