অর্থাভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী প্রিয়ার স্বপ্ন কি ভেঙে যাবে!

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বহুল আলোচিত গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী প্রিয়া রানী দাস ইতিমধ্যে ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
হয়েছেন।

সে গৌরীপুর উপজেলার তিন সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরযূবালা প্রাইমারী থেকে পিএসসি, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি, এসএসসি ও সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সন্তোষজনক নম্বর পেয়ে কৃতকার্য হন। তিনি (অনগ্রসর) রবিদাস সম্প্রদায়ভুক্ত দলিত জনগোষ্ঠীর আলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের পূর্বে তিনি ময়মনসিংহের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং- ফোকাস-এ টানা ছয় মাস ক্লাস করে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেন। পরে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঐ কোচিং এর পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শুভেচছা সহ সম্মাননা ক্রেষ্ট ও সনদ প্রদান করা হয়।

জানাগেছে, তিন ভাইবোনের মধ্যে প্রিয়া দ্বিতীয় সন্তান। বাবা দিলীপ কুমার দাস একটি পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি। মা জয়ন্তী রানী দাস একজন গৃহিণী। তিনি গৌরীপুর পৌর শহরের কালীপুর মধ্যম তরফ এলাকার বাসিন্দা। আগে দিলীপ কুমার দাস পত্রিকার পাশাপাশি টিউশনী করতেন। আজকাল পুড়াতন সিলেবাসের ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ায় এখন তিনি টিউশনী ছেড়ে দিয়েছেন। অপরদিকে সংসারের দুঃশ্চিন্তায় ও পথ্যের অভাবে শরীরে রোগবালাই ক্রমশ লেগেই রয়েছে তাঁর। পরিবারের অচলাবস্থায় রোগ পুষে রেখেই বেঁচে আছেন তিনি। পত্রিকার লেখালেখি ও বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভরশীল তার পুরো পরিবার।

প্রিয়া রানী দাস বলেন, তাঁর বাবা, মা কষ্ট করে সারা বছর তাকে প্রাইভেট কোচিং-এ পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। পরিবারের প্রয়োজনে বাবা বসত ঘরের জায়গা বিক্রি করেছেন এখন জরাজীর্ণ একটি ঘরে তাদের বসবাস। ঝড় বৃষ্টিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই ঘরেই থাকতে হয় তাদের। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শিকার তারা। তবুও বাবার মনে কোন দুঃখ নেই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো ব্যয়বহুল খরচাদি তার পক্ষে বহন করা সম্ভব না। শিক্ষা জীবনের এত বড় সুযোগ তা অর্থাভাবে ভেস্তে যেতে চলেছে। তিনি এখন নিরুপায়! আর কেই, বা দাঁড়াবে তাঁর এই অসহায় অবস্থার পাশে। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি ( বিসিএস ক্যাডার ) হিসেবে উচ্চ শিক্ষার সফলতা দেখে যেতে পারলে তিনি খুবই শান্তি পাবেন।

দিলীপ কুমার দাস বলেন, পৃথিবীতে সব বাবা,মা সন্তানের ভালোর জন্য চেষ্টা করেন কিন্তু সবার সামর্থ্য এক সমান থাকে না। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইন্টারমেডিয়েট পর্যন্ত পড়ালেখায় উপার্জিত অর্থের বেশির ভাগ তার জন্য ব্যয় করেছেন। বাবা মায়ের পরিবারের দুঃখ ঘুচিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটানোর প্রিয়ার যে, স্বপ্ন তা বাস্তবায়িত করার প্রবল ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা সবসময়ই রয়েছে তাঁর । তার দীর্ঘ বিশ্বাস প্রিয়া সত্যিই একদিন বড় হয়ে তাদের মুখ উজ্জ্বল করে পড়ালেখায় দলিতের স্মৃতি হয়ে থাকবে। বাবা হিসেবে মেয়ের জন্য তেমন কিছু করতে না পারার বিষয়টি তাকে কষ্ট দেয়।

এ ব্যাপারে গৌরীপুর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিল্টন ভট্টাচার্য বলেন, প্রিয়া রানী দাস অত্র প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থী। সে খুবই গরিব। তিনি বিভিন্ন সময়ে কলেজের পক্ষ তাকে সহযোগিতা করেন। দলিত সম্প্রদায়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক ও মাধ্যমিকেই ঝড়ে যায় কিন্তু প্রিয়া রানী দাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বিজয়ী হয়ে অত্র কলেজসহ যে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছে সে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এবং দলিত সম্প্রদায়ের আলো। সেই আলো যেন, নিভে না যায়। তিনি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন। কেউ তাকে সহযোগিতা করলেও তিনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন।

গৌরীপুর জনতা ব্যাংক শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং ১২০৩১/১ । গৌরীপুর, ময়মনসিংহ। মোবাইল নং ০১৯২৭৬৩৯৮৭৯।