অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী

শুধুমাত্র সুনাম গেয়ে নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করার মাধ্যমে তার প্রতি সম্মান জানাতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি তার জীবনের একটা বড় অংশ জেলে কাটিয়েছেন। ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার সেই স্বপ্নকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তার সে স্বপ্ন বাস্তনায়নে আমাদের কাজ করতে হবে। সুনাম গেয়ে নয়, অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা এখনো সক্রিয়। তারা এখনো দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমাদের ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তা চায় না। দেশের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে এখনো ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় আছে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই আমাদের সবার সতর্ক হবে। কোনোভাবেই তাদের বিজয়ী হতে দেওয়া যাবে না।

অপপ্রচারের বিষয়ে সতর্ক করে মন্ত্রী বলেন, সরকারবিরোধী চক্র নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মহামারি পরবর্তী সময় ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারাবিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল। বিশ্বজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। পেট্রলের দাম চারগুণ বেড়েছে, খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি শিগগির এ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তাই অপপ্রচারে কান দেবেন না। আগামী দিনে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে শেখ হাসিনা সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যখাত অনেক এগিয়ে গেছে। এর অবদান অনেকাংশেই বঙ্গবন্ধুর। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ে স্বাস্থ্য খাতে অনেক কাজ করেছেন তিনি। স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই তার প্রতিষ্ঠা করা। শেখ হাসিনা সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। স্বাধীনতার সময় দেশে মাত্র ৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ছিল, কোনো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ছিল না। সেখানে আজ বেসরকারি মেডিকেলই ৭২টি, সরকারি ৩৮টি, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ৫টি। এছাড়া স্বাস্থ্যের বিভিন্ন শাখার জন্য একাধিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। এক সময় দেশে কোনো নার্সিং ইনস্টিটিউট ছিল না। এখন অনেক নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে।

‘এর ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন হিমশিম খেয়েছে সেখানে আমরা সফলতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছি। মহামারি মোকাবিলায় আমরা বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ায় প্রথম হয়েছি।’ যোগ করেন মন্ত্রী।

করোনাকালে বেসরকারি খাতের ভূমিকা স্মরণ করে তিনি বলেন, করোনাকালে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসেছে। তারা আইসিইউ, সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে মহামারি মোকাবিলায় কাজ করেছে। তারা এগিয়ে না আসলে শুধুমাত্র সরকারের পক্ষে মহামারি সামাল দেওয়া সম্ভব হতো না। তারা দেশের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। এতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাত সমৃদ্ধ হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব সাইফুল ইসলাম বাদল বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে তাদের কাছে পরিচিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু একজন সুদূরপ্রসারী চিন্তার মানুষ ছিলেন। তাকে হত্যার মাধ্যমে দেশের আগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়া হয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার সে কাজকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হয়তো মানুষের তুলনায় পর্যপ্ত নয় কিন্তু তা কমও নয়। সবাই যদি যদি নিজ নিজ জায়গায় থেকে কাজ করি তাহলে মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে।

এএএম/ইএ