অস্ট্রেলিয়ান শিবিরের ভিত কাঁপিয়েই হারলো বাংলাদেশ

লক্ষ্যটা জানা বা শোনার পরই বেশিরভাগ দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন টেলিভিশনের সামনে থেকে। এই ম্যাচে বিন্দুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা সম্ভব তাও ধারণা করেননি অনেকে। কিন্তু তখনও হাল ছাড়েননি টাইগাররা। লক্ষ্যের প্রতি ছুটেছেন প্রতিটা ক্ষণ। ৩৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৪৮ রানে হারলেন বটে, তবে তার আগে ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান শিবিরের। ম্যাচে কয়েকবার জয়ের স্বপ্নও জাগিয়েছেন টাইগাররা। মুশফিকুর রহিমের শতরানে ভর করে ৩৩৩ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। একদিনের ক্রিকেটে এটি টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

এই জয়ের ফলে ৬ ম্যাচ থেকে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। এরমধ্যে পাঁচটি ম্যাচেই জয় পেয়েছেন পাঁচবারের বর্ষসেরারা। অন্যদিকে ছয় ম্যাচ থেকে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানেই থাকলো বাংলাদেশ।

আজ বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নারের ১৬৬ রানের দানবীয় ইনিংস ও ওসমান খাজার দৃঢ়তায় ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮১ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের পক্ষে তিনটি উইকেট তুলে নেন সৌম্য সরকার। একটি উইকেট পান মুস্তাফিজুর রহমান।

৩৮২ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে শুরুতেই দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝিতে সৌম্য সরকারকে হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ২৩ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১০ রানে সাজঘরে ফেরেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। উইকেট হারালেও রানের চাকা লক্ষ্য বরাবর রেখেই খেলছিলেন আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। দুজন মিলে ৭৯ রানের একটি ভালো জুটিও গড়েন। আজও বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন বিশ্বকাপের এই আসরে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাকিব। কিন্তু সেই স্বপ্নের জাল বিস্তৃতি লাভ করার আগেই থামিয়ে দেন মারকাস স্টইনিস। ব্যক্তিগত ৪১ রানে ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দানা বাঁধছিলো মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালের জুটিও। দলীয় ১৪৪ রানের মাথায় মিশেল স্টার্কের বলে বোল্ড আউট হয়ে ব্যক্তিগত ৬২ রানে ফেরেন তামিম ইকবাল। কিছুক্ষণ পর লিটন দাসও আউট হলে স্বপ্ন একেবারেই ফিকে হয়ে আসে টাইগারদের।

এখান থেকেই যাত্রা শুরু মিডল অর্ডারের দুই স্তম্ভ মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। দুজন মিলে অস্ট্রেলিয়ান শিবিরে ভীতির সঞ্চার করেন ভালোভাবেই। ক্রমেই ছোট হয়ে আসতে থাকে লক্ষ্য। ছটফটানি বাড়ে অস্ট্রেলিয়ান বোলার ও ফিল্ডারদের মধ্যে। বিশাল লক্ষ্যও পাড়ি দেয়া সম্ভব এমনটাই জানান দিচ্ছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। দেখতে দেখতে লক্ষ্য নেমে আসে দুই সংখ্যার ঘরে। ১২৭ রানের জুটি গড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত ভালোভাবেই ম্যাচে ছিলো বাংলাদেশ। তার জায়গায় নামা সাব্বির রহমান পরের বলেই শূন্য রানে আউট হলে হালে পানি আসে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের। ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। শেষমেষ নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৩৩৩ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সতর্ক শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ার দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার। দুজনে মিলে সংগ্রহ করেন ১২১ রানের বড় জুটি। সৌম্য সরকারের বলে আউট হওয়ার আগে ৫১ বলে ৫৩ রান করেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। এরপর ওয়ার্নারের সঙ্গে যোগ দেন ওসমান খাজা। ১৯২ রানের এই জুটিই বাংলাদেশকে ছিটকে ফেলে ম্যাচ থেকে। সৌম্য সরকারের দ্বিতীয় শিকার ওয়ার্নার ১৪৭ বলে খেলেন ১৬৬ রানের বিশাল ইনিংস। দলীয় স্কোর তখন ৩১৩ রান। দলীয় ৩৫৩ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৮৯ রানে সৌম্য সরকারের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ওসমান খাজা। এর আগে সৌম্য সরকারের ওই ওভারেই রান আউট হন ম্যাক্সওয়েল। এতে অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি কিছুটা কমে আসে।