ঈদযাত্রা : ট্রেনে, বাসে মানুষ আর মানুষ

একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন আমানউল্লাহ আমান। তাঁর বাড়ি জামালপুর। আজ বৃহস্পতিবার থেকে কারখানায় ছুটি শুরু হয়েছে। সকালেই চলে এসেছেন কমলাপুর রেলস্টেশনে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কমিউটার ট্রেনের টিকিট কেটেছেন পাক্কা চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে। এখন আছেন ট্রেনে ওঠার অপেক্ষায়।

কমলাপুর রেলস্টেশনে আজ যাত্রীদের ব্যাপক ভিড়। আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে ভিড় কম। আগে থেকে কেনা টিকিটের যাত্রীই বেশি। শেষ মুহূর্তে যাঁরা টিকিট কিনছেন, বেশির ভাগই পাচ্ছেন দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট। ভাগ্য ভালো থাকলে কেউ কেউ পাচ্ছেন বিশেষ আসনের টিকিট। তবে মূল ভিড় দেখা গেছে কাছেপিঠের গন্তব্যে চলা কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে।

আজ সকালে জামালপুর, বলাকা, দেওয়ানগঞ্জ ও তিতাস কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ছিল লম্বা লাইন। কিছুক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে চিৎকার। লাইনের বাইরে থেকে যেন কাউকে আগে টিকিট কেনার সুযোগ না দেওয়া হয়। কেউ বলছেন ‘লাইনে দাঁড়ান’, আবার কেউ কেউ লাইনের বাইরে থেকে ঢোকার চেষ্টা করা ব্যক্তির উদ্দেশে দিচ্ছেন সাবধানবাণী, ঝগড়াও শুরু হয়ে যাচ্ছে কখনো কখনো।

আমানউল্লাহ যেমন পাঁচটি টিকিট কিনে কোন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে, তার খোঁজ করছিলেন। তিনি আসনের টিকিট পেয়েছেন তিনটি। বাকি দুটি দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট। এ নিয়ে তাঁর আফসোসের শেষ নেই। সকালে আরেকটু আগে এলে হয়তো পেতেন আসনের টিকিট!

কমলাপুর রেলস্টেশনে অনেকে নিচ্ছেন জরুরি টিকিট। প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখেই রেলওয়ের কর্মকর্তারা জরুরি টিকিট বিক্রি করছেন। এগুলো মূলত দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইহসান করিম যাবেন চট্টগ্রাম। আগে না কাটায় এখন জরুরি টিকিটই তাঁর ভরসা। তিনি বলেন, ‘আগে ভেবেছিলাম বাসে যাব। কিন্তু যানজটের কথা ভেবে এখানে এলাম। দাঁড়িয়ে যেতে কষ্ট হবে। কিন্তু কী আর করা! যেতে তো হবে।’

কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘সব ট্রেন ঠিক সময়ই ছাড়ছে। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময় পরপর আমরা ঘোষণা দিচ্ছি।’

বাসের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। দূরপাল্লার বেশির ভাগ বাসের টিকিটই আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। সেখানে শেষ সময়ে টিকিট কেনার ধুম নেই। এখন শুধু যাত্রীদের গাড়িতে ওঠার অপেক্ষা। শ্যামলী পরিবহনের উত্তর কমলাপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক নিলয় ঘোষ বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত গাড়ি ঠিক সময়েই ছাড়া গেছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুক্ষণ পর থেকে সমস্যা হতে পারে।’ তিনি জানান, রাস্তায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। যেখানে যেতে পাঁচ ঘণ্টা লাগে, সেখানে এখন দু-তিন ঘণ্টা বেশি লাগছে।

মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ছিল প্রচণ্ড ভিড়। এখান থেকে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ উত্তরবঙ্গ ও সিলেট, চট্টগ্রামের উদ্দেশেও বাস ছাড়ে। টিকিট কাটার তাড়া দেখা গেছে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে ছাড়া বাস কোম্পানির কাউন্টারে। এগুলোতে তাৎক্ষণিক টিকিট বিক্রি হয়। আর দূরপাল্লার বাসগুলোর টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।

ফারহানা পারভিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। যাবেন নওগাঁ। টিকিট কেটেছেন একতা ট্রান্সপোর্টে। ফারহানা বলেন, ‘বাস আসতে একটু দেরি হচ্ছে। দেখি কখন আসে। যেতে অনেক দেরি হবে, তা তো জানা কথাই। প্রতিবারই এমন হয়।’

এসআর ট্রাভেলসের বাসযাত্রী নিয়ে যায় রংপুর, গাইবান্ধা ও বুড়িমারীতে। টিকিট কাউন্টারের সুপারভাইজার সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে আগে থেকে টিকিট কেটে রাখা যাত্রীদের পাঠাচ্ছেন তাঁরা। অন্যান্য সময় যেতে লাগে ৮-১০ ঘণ্টা। এখন লাগছে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা। দেরির কারণ হিসেবে ভাঙা রাস্তা ও যানজটকে দায়ী করেন সাইফুদ্দিন।

রাস্তায় যানজট নেই বলে দাবি করেন মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি শওকত আলী। তিনি বলেন, ‘অনেক গাড়ি আছে। সবকিছু ঠিকভাবেই চলছে। বরং যাত্রীর চাপ কম।’