উপকূলের জানমালের নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে ১০ দফা দাবি

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা ও উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠনসহ উপকূলীয় এলাকার জানমালের নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে ১০ দফা দাবি তুলেছে সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উপদ্রুত সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বিকালে শ্যামনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুপেয় পানির সংকট, লবণাক্ততা প্রভৃতির কারণে উপকূলীয় এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। টেকসই বাঁধ না থাকায় প্রতি বছর কোন না কোন সময়, কোন না কোন উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। পরিকল্পনা হয়, বাজেট হয়, কিন্তু হয় না স্থায়ী শক্তিশালী বেড়িবাঁধ। বিগত বছরগুলোতে উচ্চ জোয়ারের চাপ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তেমন দেখা না গেলেও সম্প্রতি মার্চ মাসে উচ্চ জোয়ারের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে মানুষের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট সৃষ্টি করেছে। এই সংকট নিরসন না হতেই সামনে আসছে বর্ষা মৌসুম। এ সময়ে নদীর খর ¯্রােত ও উচ্চ জোয়ারের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এসময় আরও বলা হয়, দেশের মানুষ যখন বিভিন্ন আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকে, তখন উপকূলের মানুষ ভয়ে থাকে কখন বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করবে। উপকূলের মানুষের একান্ত দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ দিয়ে তাদের রক্ষা করা হোক।

এসময় উপকূলীয় এলাকার জানমালের নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে ১০ দফা দাবি পেশ করেন সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরানের নেতৃবৃন্দ।

এর দাবির মধ্যে রয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা, উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ, জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারসহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরী তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্তকরণ, উপকূলীয় সকল মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়, তার সর্বোচ্চ ব্যবহারে নিশ্চিতকরণ, দুর্যোগ প্রবণ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলবাসীর জানমাল সুরক্ষায় কার্যকর অবকাঠামো সুবিধা গড়ে তোলা, ঝড়-ঝঞ্ঝা, নদীভাঙ্গন ও ভূমিক্ষয় ঠেকাতে উপকূল, দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ এবং প্যারাবন বা সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শ্যামনগর উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম।

আরও উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিছুর রহিম, সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সদস্য সচিব মাধব চন্দ্র দত্ত, সদস্য নিত্যানন্দ সরকার, শ্যামনগর উপজেলা অধিপরামর্শ ফোরামের সদস্য রনজিৎ বর্মন, অ্যাড. স্বপন কুমার মন্ডল, বেসরকারি সংস্থা লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল প্রমূখ।