এত দূর থেকে সেই আম্পায়ার কীভাবে বুঝলেন নট আউট?

তামিম ইকবাল দুঃখ করতেই পারেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অভিষেকেই দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছেন। দলকে নিয়ে গেছেন তিন শ রানের ওপারে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম তিন শ। এরপরও জুটল কি না পরাজয়ের যন্ত্রণা!

দুঃখটা তো এখানেই শেষ নয়। একটা প্রশ্ন তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াবেই—লং অনে নেওয়া এউইন মরগানের ‘ক্যাচ’টা আম্পায়াররা বাতিল করে না দিলে কি অন্য কিছু হতো? মরগান তখন ২২ রানে। জয় থেকে ইংল্যান্ড তখনো ১০২ রান দূরে। সেটি করতে হতো ৮৬ বলে। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ অনেক লম্বা। এরপরও বেন স্টোকস ছিলেন, ছিলেন জস বাটলার-মঈন আলীর মতো ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ড হয়তো তারপরও জিতত। অথবা কে জানে! ক্রিকেটে রান থামানোর জন্য উইকেট নেওয়ার মতো মহৌষধ আর দ্বিতীয়টি নেই। এক উইকেট অনেক সময়ই আরেকটির পতন ডেকে আনে।

তামিম নিশ্চিত, ক্যাচটি তিনি পরিষ্কারই নিয়েছেন। মাঠের দুই আম্পায়ারের তা মনে হয়নি। টিভি আম্পায়ারের সাহায্য চাইলেন বটে, তবে এর আগে সংকেত দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত ‘নট আউট।’ এত দূর থেকে কীভাবে তা বুঝলেন, তা একটা প্রশ্ন বটে। টিভি রিপ্লেতে মনে হলো, বল তামিমের হাতে যাওয়ার আগে ঘাস ছুঁলেও ছুঁয়ে থাকতে পারে। ব্যস, এমন মনে হওয়া মানেই তো ব্যাটসম্যানের বেঁচে যাওয়া। তামিম বেশ কিছুক্ষণ আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক করলেন। কিন্তু তাতে আর কী লাভ!

এরপর যা হলো, তা রীতিমতো বোলিং নিয়ে ছেলেখেলা। জো রুট আর মরগান মিলে বাংলাদেশ ইনিংসের পর রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার সম্ভাবনা জাগানো ম্যাচটিকে একেবারেই একতরফা বানিয়ে ফেললেন। জো রুট তামিমের সেঞ্চুরির জবাব দিলেন পায়ের পেশিতে পড়া টানকে তুচ্ছ বানিয়ে অপরাজিত ১৩৩ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসে। মরগান অপরাজিত ৭৫ রানে। ১৬ বল আগেই ম্যাচ শেষ। ওভাল সরগরম করে রাখা বাংলাদেশি দর্শকদের কণ্ঠ মিইয়ে গেছে আরও আগেই।

নিজেদের মাঠে অতিথি দল মনে হওয়ার অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে ইংল্যান্ডের। তবে সবই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। কাল ওভালও অনেকটা শত্রু শিবিরের রূপ নিল ইংল্যান্ডের জন্য। দর্শক সংখ্যায় হয়তো বাংলাদেশিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। তবে চিৎকার-চেঁচামেচিতে ইংলিশদের সাধ্য কি তাদের সঙ্গে লড়ার! মিরপুরের মতো এখানেও মানব-বাঘ! হাতে হাতে ‘পুতুল বাঘ’ তো অসংখ্য। হেলস-রুট জুটি যখন শুরুর ধাক্কাটা সামলে আরামে খেলে যাচ্ছেন, মাশরাফিদের উদ্দীপিত করতে ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ স্লোগানে মুখরিত পুরো স্টেডিয়াম।

লাল-সবুজের উৎসব শুরু ম্যাচের আগেই। ওভালের মূল প্রবেশপথ হবস গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল, তিন তরুণ আর তিন তরুণী বিভিন্ন গানের তালে ক্লান্তিহীন নেচে চলেছেন। পরনে লাল-সবুজ। ম্যাচ শেষে ওভাল টিউব স্টেশনমুখী বাংলাদেশের জার্সি পরা বিমর্ষ মুখের সারি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ম্যাচের ফল।

ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং-ব্যর্থতা এই ম্যাচের দলেও ছায়া ফেলেছে। ৮৪ রানের ছড়িয়ে দেওয়া আতঙ্ক ছাড়া অতিরিক্ত একজন ব্যাটসম্যান খেলানোর আর কী ব্যাখ্যা হতে পারে! দুদিন আগে এই মাঠেই সেই প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ বোলিং করা মেহেদী হাসান মিরাজকে তাই বসে থাকতে হলো। দুই ইনিংসের মাঝখানের বিরতিতে যা নিয়ে খুবই বিস্মিত দেখাল সঞ্জয় মাঞ্জরেকারকে, ‘এত ব্যাটসম্যানের কী দরকার! মেহেদী থাকলে ইংল্যান্ড এখন খুবই দুশ্চিন্তায় থাকত।’

মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক মিলে মাত্র নয় বল খেলার সুযোগ পাওয়ায় বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানোটা অযৌক্তিক বলে প্রমাণিত। বোলার একজন কমে যাওয়ায় অনিয়মিত বোলারদের দিয়ে বোলিং করাতে হলো। মোসাদ্দেক একাই করলেন ৭.২ ওভার। সৌম্য ও সাব্বির মিলে বাকি ৩। সাব্বির একটা উইকেটও নিলেন। তবে তিনজনের ১০.২ ওভারে রান হয়ে গেল ৭৩। দলের একমাত্র স্পেশালিস্ট স্পিনার সাকিব আল হাসান অবশ্য এটিকেও খুব খারাপ মনে করতে দিচ্ছেন না। ৮ ওভারে তিনি যে দিয়েছেন ৬২ রান!

বাড়তি ব্যাটসম্যান অপ্রয়োজনীয় বলে প্রমাণিত করার কাজটা আসলে করেছেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। দুজনের জুটিতে ধুলায় গড়াগড়ি করল একাধিক রেকর্ড। ওভারে ৬.৫৯ গড়ে এই দুজনের ১৬৬ রান দেশের বাইরে যেকোনো জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ওভালে সর্বোচ্চ তৃতীয় উইকেট জুটিও।

সমস্যা হলো, বাংলাদেশের একটি জুটির জবাব দিয়েছে ইংল্যান্ড দুটি জুটি গড়ে। অ্যালেক্স হেলস ও জো রুট মিলে ১৫৯ রান। পরপর দুই বলে চার আর ছক্কায় ৯৫-এ পৌঁছে যাওয়া হেলস পরের বলে আরেকটি ছক্কায় সেঞ্চুরি করতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে গেলেন সীমানায়। রুট আর মরগানের অপরাজিত ১৪৩ রানের জুটি সেটিকে শুধুই হেলসের ব্যক্তিগত দুঃখ বানিয়ে রাখল। তামিম অবশ্য আক্ষেপ করতেই পারেন, ক্যাচটি বাতিল না হলে তো আর এই জুটিটা কবেই শেষ হয়ে যায়!-প্রথম আলো