রং নাম্বারে মিসড কল! অতঃপর অ্যাসিড ঝলসানো মেয়েটিকেই..

মোট সতেরো বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আরও কতবার করতে হবে কে জানে! তাও কি দূর হবে মুখের বীভৎসতা। সব নিজের ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছিলেন ললিতা বংশী। বছর পাঁচেক আগে পারিবারিক বিবাদের জেরে চাচাতো ভাইয়েরা তার মুখে ছুড়ে মেরেছিল অ্যাসিড। ঝলসে যাওয়া মুখ নিয়েই বেঁচেছিলেন ২৫ বছর বয়সী এই তরুণী।

যদিও তার বেঁচে থাকার ইচ্ছা করত না। অ্যাসিডের তীব্র দহনের চেয়ে কম ছিল না দিন কাটানোর অসহ্য জ্বালা। কাজ করেন একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। আম বিক্রি করে সেই সংস্থা। কাজের মাঝে একদিন ভুল করে এক নাম্বারে মিসড কল দিয়ে ফেলেছিলেন ললিতা।

আর পাঁচটা মিসড কল-এর মতো সংক্ষিপ্ত হল না সেই পর্ব। অপর প্রান্ত থেকে আবার ফোন এল ললিতার কাছে। ফোন গেলও। এভাবেই চলল আলাপ পর্ব। কীভাবে যেন জন্ম নিল পূর্বরাগ। কিন্তু ললিতা জানতেন‚ দেখা হলে পূর্বরাগ বেসুরে বাজতে সময় লাগবে না। কিন্তু মাঝে মাঝে মানুষের বেসুরগুলোকেও কেউ সপ্তসুরে বাজিয়ে দেয়।

সেটা উপলব্ধি করলেন ললিতা। যখন তার সঙ্গে দেখা হল মিসড কলের ওপারে যিনি আছেন‚ তার সঙ্গে। তিনি রবিশঙ্কর সিং। পেশায় ব্যবসায়ী। আগে ছিল ভালো লাগা। দেখা হওয়ার পরে ললিতার ক্ষতবিক্ষত মুখটাকেই ভালোবেসে ফেললেন এই যুবক।

রং নাম্বারের একটা মিসড কলকেই করে নিলেন জীবনের পথনির্দেশ। স্থির করলেন‚ বিয়ে করলে‚ ললিতাকেই বিয়ে করবেন। নিজের মুখটাকে আয়নায় দেখে যত সরে আসার চেষ্টা করেছেন ললিতা‚ তত তাকে ভালোবাসার নিগড়ে বেঁধেছেন রবিশঙ্কর। সদ্য বিয়ে হয়েছে তাদের। বিয়ের সব দায়িত্ব‚ ব্যয়ভার সামলেছে একটি বণিক প্রতিষ্ঠান।

ঘটনাটি ভারতের মুম্বাইয়ের। সেখানকার দাদারে তাদের বিয়ের আসরে ভোজন-রোশনাই-কনের লেহঙ্গা-অলঙ্কার-বরের সাজ‚ কোথাও কোনও কমতি ছিল না। অতিথি ছিলেন দেড়শো জন। অভ্যাগতদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতা বিবেক ওবেরয়‚ কংগ্রেস বিধায়ক নীতিশ রাণে এবং মুম্বাইয়ের প্রাক্তন শেরিফ জগন্নাথ রাও হেগড়ে।

বিয়ের পরে কোথায় নতুন সংসার পাতবেন রবিশঙ্কর-ললিতা‚ কোথায় যাবেন মধুচন্দ্রিমায়‚ সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে ওই সংগঠন। ললিতার পরবর্তী অস্ত্রোপচারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। রং নাম্বারের দৌলতে ললিতার জীবন এখন রঙিন। তাদের দাম্পত্যের উজ্জ্বলতা আরও গাঢ় হোক, এই শুভ কামনা রইল আমাদেরও।