কঠোর অবস্থানে সরকার : দাবি আদায়ে কি ভাবছে ঐক্যফ্রন্ট

জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সংসদ বাতিলের মতো দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা নতুন জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ আজ রাজপথের আন্দোলনে যাচ্ছে।

সিলেট শহরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই জোটের জনসভায় বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।।

যদিও ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার প্রধান দাবিগুলোই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উড়িয়ে দিয়ে ক্ষমতাসীনরা।

তবে সরকার বিরোধী নতুন জোট নেতারা বলছেন তীব্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।

নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা এবং আন্দোলন দমনে ক্ষমতাসীনদের কঠোর অবস্থানের মধ্যে এই জোট কিভাবে দাবি আদায় করবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন।

ঐক্যফ্রন্টের শরিকদল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জনগণকে নিয়ে ধাপে ধাপে তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করা হবে।

“জনগণকে সংগঠিত করেই দাবি আদায় করবো। এর জন্য আন্দোলনের যতগুলো কর্মসূচী হতে পারে সেগুলো অবরোধ থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যতো রকম কর্মসূচী আছে সবগুলো পালন করবো আমরা।”

বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে ধাপে ধাপে আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার কথা জানাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। মিস্টার মান্নার দাবি তাদের মূল শক্তি হচ্ছে দেশের আপামর জনগণ।

তিনি বলেন, “জনগণের শক্তি বলেই আমরা বলছি যে জনগণকে সাথে নিয়েই সেই ধরনের একটা অভ্যুত্থান হবে। অভ্যুত্থান মানে তো জনঅভ্যুত্থান। জনগণ সাথে আসলে অভ্যুত্থান হবে না কেন?”

জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির সিনিয়র নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে প্রথম পর্যায়ে জনমত সৃষ্টির জন্য সারাদেশে সভা সমাবেশ হবে।

বড় শহরে যাবার জন্য সড়ক পথে শত শত গাড়ি নিয়ে তারা যাত্রা করবেন।

মওদুদ আহমদ বলেন, “গণ বিস্ফোরণ হবে। মাঠে ময়দানে মানুষের জোয়ার উঠে যাবে। এখন যদি সরকার সেটি করতে না দেয়, বাঁধা দেয় সেটা তো সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে। তারা যদি সশস্ত্র বাঁধা দেয়, তার পরিণতি নির্মম হবে। সেখানে তো আর গণতন্ত্র থাকবে না।”

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জোট হলেও তাদের মূল শক্তির জায়গা বিএনপি এবং তাদের সমর্থক।

সরকারবিরোধী এ জোটের নেতা হিসেবে সামনে রাখা হয়েছে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনকে।

ঐক্যফ্রন্ট নেতৃত্বের ইমেজ কাজে লাগিয়ে একদিকে দেশে জনসমর্থন আদায় অন্যদিকে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল নিচ্ছে।

মওদুদ আহমদ বলেন, “বিদেশের কূটনীতিকদেরকে আমরা ব্রিফ করছি, এখানে যারা আছেন। আর বিদেশে যারা বিশেষ করে ওয়াশিংটনে এবং ভারতের দিল্লীতে, চীন দেশে যেখানে আমাদের শুভাকাঙ্খীরা আছেন তারা চেষ্টা করছেন যারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাদের বলার জন্য।”

নির্বাচনকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি বিরোধে ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থা জারি হয় ও সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে।

ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের কাছে প্রশ্ন ছিল নির্বাচনী সংকটে আবারো কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ চায় কিনা তারা?

এ প্রশ্নে মওদুদ আহমদ বলেন, “আমরা কোনো হস্তক্ষেপ চাই না। আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণভাবে মানুষের ভোটের মধ্য দিয়ে সরকারের পরিবর্তন হোক। আমরা অনেক সাফার করেছি। এ জাতি অনেক সাফার করেছে।”

একই প্রশ্নের উত্তরে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “তৃতীয় কোনো পক্ষকে সরকারই আহ্বান করতে পারে। আমাদের আহ্বানে তো তৃতীয় পক্ষ আসবেও না আর আমরা সেটি চাচ্ছিও না। কারণ আমরা জন-আন্দোলনে বিজয়ের সম্ভাবনাই প্রচুর দেখতে পাচ্ছি।”

বিকল্প ধারাকেই তো সম্পৃক্ত করতে পারলেন না, জনগণকে কিভাবে পারবেন : মাহী বি চৌধুরী

এদিকে সরকার বিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে থাকা বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার দল বিকল্প ধারাকে বাদ দিয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বলেন, ঐক্যফ্রন্ট জাতিকে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতে শুরুতেই ব্যর্থ হয়েছে।

“মানুষ রাস্তায় নামবে, মানুষ অস্ত্রের মুখে এসে দাঁড়াবে, জীবনের ঝুঁকি নেবে, গুলি খেয়ে মরে যাবে, তারপরে আওয়ামী লীগের যায়গায় আবার নতুন বিএনপি সরকার গঠন করবে এককভাবে আবার স্বেচ্ছাচার চলতে থাকবে, দুঃশাসন চলতে থাকবে মানুষ কেন তাহলে সেই ঝুঁকি নেবে?”

“এই জায়গায় আমরা বার বার বলছি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে হবে, সত্যিকারের স্বপ্ন দেখাতে হবে।”

মাহী বি চৌধুরী আরও বলেন, “আমরা যে ক্ষমতার জন্য এবার রাজনীতিটা করছি না সেই জিনিসটা পরিষ্কার করতে হবে। সেটা পরিষ্কার না করতে পারলে জনগণকে সম্পৃক্ত করবেন কী করে? বিকল্প ধারাকেই তো সম্পৃক্ত করতে পারলেন না!”

-বিবিসি বাংলা