মামুনুলের পরামর্শে তালাক হয়

‘কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণাকে পার্লারে কাজ দিয়ে সাবলেটে রাখেন মামুনুল’

বিয়ের আশ্বাসে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে হেফাজতের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা।

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় বাদী হয়ে এ মামলা করেন তিনি।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর বসিলার একটি বাসা থেকে ঝর্ণাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ঝর্ণাকে দেওয়া হয় তার বাবার জিম্মায়। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ঝর্ণা।

মামলার এজাহারে জান্নাত আরা ঝর্ণা বলেন, বিয়ের প্রলোভন ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০১৮ সাল থেকে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে আমাকে নিয়ে যান।

ঝর্ণা বলেন, ২০০৫ সালে তার স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্বামীর বন্ধু হওয়ায় আমাদের বাড়িতে মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। মামুনুলের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছিলাম। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্যের মধ্যে প্রবেশ করে মামুনুল হক শহীদুল ও আমার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। মামুনুলের কারণে আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপোড়েনে একপর্যায়ে মামনুলের পরামর্শে বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

অভিযোগে জান্নাত বলেন, ‘বিচ্ছেদের পর তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় মামুনুল আমাকে খুলনা থেকে ঢাকায় আসার জন্য বলেন। আমি ঢাকায় চলে আসি। মামুনুল আমাকে তাঁর অনুসারীদের বাসায় রাখেন। সেখানে নানাভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তাঁর প্রলোভনে পা দিই। এরপর তিনি উত্তর ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় আমাকে সাবলেট রাখেন। একটি বিউটি পার্লারে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় থাকার খরচ মামুনুলই দিচ্ছিলেন।’

জান্নাত আরা ঝর্ণা অভিযোগ করে বলেন, ‘৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আটকে রাখেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি।’

জান্নাত বলেন, ‘পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আমার দুরবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকে উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।’

প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক এক নারীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে যান। পরে সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। মামুনুল হকের দাবি তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রিসোর্টে অবকাশ যাপনে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। হেফাজত কর্মীরা নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ করে। রয়্যাল রিসোর্টসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়।

পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় কার্যালয়েও হামলা হয়। স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িঘরেও হামলা-ভাঙচুর করা হয়।

এরপর গত ১৮ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে তোলে মামুনুল: ঝর্ণা

মামলার এজাহারে ঝর্ণা উল্লেখ করেছেন, তার প্রথম স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের সঙ্গে সংসার ভাঙার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মামুনুল। তাদের দাম্পত্য জীবন বিষিয়ে তুলেছিলেন তিনি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিয়ের আশ্বাসে মামুনুল আমার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে। কিন্তু বিয়ের কথা বললে কালক্ষেপণ করতে থাকে মামুনুল। ২০১৮ সাল থেকে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে আমাকে নিয়ে যান।

ঝর্ণা বলেন, ২০০৫ সালে মামুনুলের সঙ্গে তার পরিচয়। শহীদুলের মাধ্যমেই এই পরিচয়। স্বামীর বন্ধু হওয়ায় তাদের বাড়িতে মামুনুলের ছিল অবাধ যাতায়াত। ‘মামুনুল আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্যের মধ্যে প্রবেশ করে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন এবং আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে তোলেন। সাংসারিক এই টানাপোড়েনে একপর্যায়ে মামুনুলের পরামর্শে আমাদের তালাক হয়।’

রয়্যাল রিসোর্টকাণ্ডের বিষয়ে ঝর্ণা বলেন, ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। রিসোর্টকাণ্ডের পর পরিচিতজনের বাসায় জোরপূর্বক আটকে রাখেন মামুনুল, যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি বাবা-মাসহ কারও সঙ্গে।

তিনি বলেন, পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।

এর আগে গত ১১ এপ্রিল ঝর্ণার বড় ছেলে আব্দুর রহমান জামি রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ছাড়া ২৬ এপ্রিল ঝর্ণার বাবা মেয়েকে উদ্ধারের জন্য কলাবাগান থানায় আরেকটি জিডি করেন।

জিডিতে ঝর্ণার বাবার অভিযোগ, মামুনুল হক ঝর্ণার সুখের প্রথম সংসার ভেঙে দিয়েছে। সেই সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। একপর্যায়ে জীবনের তাগিদে কাজের সন্ধানে ঝর্ণা ঢাকায় এসে উত্তর ধানমন্ডির একটি বাসায় উঠে।

জিডিতে আরও বলা হয়, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ঘটনার পর তিনি জানতে পারেন যে, তার মেয়েকে ইসলামি শরিয়তের বিধান মোতাবেক বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন মামুনুল হক।

ওই ঘটনার পর তিনি তার মেয়ের ঢাকার ঠিকানায় এসে মেয়েকে না পাওয়ায় মনে করেন মামুনুল হকের লোকজন তার মেয়েকে অপকৌশল করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছেন।

ঝর্ণার বাবা জিডিতে আরও বলেন, জিডি করার দুদিন আগে ঝর্ণা ফোন করে তার ছেলেকে জানান, তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন। তার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ জন্য তাকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার করতে বলা হয়। এ ছাড়া যে কোনো সময় তাকে মেরে ফেলা হতে পারেও বলে জানান।

আবেদনের প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল জান্নাত আরা ঝর্ণার অবস্থান জানার চেষ্টা করেন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় ঝর্ণাকে আটকে রাখা হয়েছে। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। যে বাসা থেকে ঝর্ণাকে উদ্ধার করা হয় সেটি মামুনুল হকের বোন দিলরুবার বাসা বলে জানিয়েছে পুলিশ।