কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের তিন সন্দেহ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন নিয়ে সরকারের ভেতর সন্দেহ বিরাজ করছে। সরকার প্রধানও এ বিষয়ে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছেন। কোটা সংস্কারের এ আন্দোলন মূলত তিনটি বিষয়ে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। সরকার ও আওয়ামী লীগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্যানুযায়ী, প্রথমত- বিএনপি-জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে মিলিত হয়ে উস্কানি দিচ্ছে, যাতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যায়। দ্বিতীয়ত- গত কয়েক বছরে ছাত্রলীগে বিভিন্ন সময়ে যাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে তারাও সরকারের বিরুদ্ধে এ আন্দোলনে জড়িয়েছে। তৃতীয়ত- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়ুয়া ছাত্রলীগের একটি অংশ ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলন বানচাল করতে চায় -এমন একটি অংশও চক্রান্তে নেমেছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাবি, এ ধরনের অস্থিরতা থাকলে ছাত্রলীগের একটি অংশ মনে করছে সম্মেলন ঠেকানো সম্ভব। ফলে তারাও কিছু শিক্ষার্থীকে মাঠে নামিয়েছে। সরকারের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে এভাবেই দেখছেন। তারা এ তিন কারণ মাথায় নিয়ে আন্দোলন নিরসনে কাজ শুরু করেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, রোববার (৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলের অপর নেতাদের কাছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানতে চেয়েছেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারী এরা কারা? এদের পারিবারিক পরিচয় কী? কোনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহনকারী পরিবারের সন্তান এ আন্দোলনে জড়াতে পারে না।

জানা গেছে, গত রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উল্লিখিত এ তিনটি কারণ অবহিত করেন উপস্থিত নেতারা। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তারা আরও জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থানে থাকবে সরকারের। তবে আন্দোলনকারীদের ‘কাউন্সিলিং’ করে আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। এ জন্য দল ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাদেরকে এ পথ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের ৫ দফা দাবিতে রোববার থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে রাজপথ অবরোধের আন্দোলনে নেমেছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর পুলিশ টিয়ারসেল, কাঁদানি গ্যাস ছুঁড়ে ও লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর শুরু হয় দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলা। একই দাবিতে আজ সকাল থেকে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।