খাগড়াছড়িতে জেলা বিএনপির জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় গায়েবী ও মিথ্যা মামলা,গন গ্রেফতার, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও ১০দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার(২৬শে মে) দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি এই জনসমাবেশের আয়োজন করে।

জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের জাতীয়বাদী দল বিএনপি খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূইয়া। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল আল নোমান। সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা উপজেলা পৌর ইউনিয়ন ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা।

জনসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রবীন চন্দ্র চাকমা, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবসার, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো: মোশারফ হোসেন, অনিমেষ চাকমা রিংকু, আব্দুর রব রাজা, মাহবুবুল আলম সবুজ, নজরুল ইসলাম, শাহেদুল আলম সুমন প্রমুখ। বক্তারা অভিযোগ করেন সমাবেশ বানচাল করতে গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা করে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। সমাবেশে আসার সময় বিভিন্নস্থানে হামলা চালিয়ে অসংখ্য নেতা-কর্মীদের আহত করে। সরকার পতনের একদফা দাবি দেয়ার আহবান জানান বক্তারা।

বিএনপির গাড়ি বহরে হামলা-পাল্টা অভিযোগ আওয়ামী লীগের:
খাগড়াছড়িতে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার(২৬শে মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খাগড়াছড়ি কলেজ সড়কে আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগকে দায়ী করেছে বিএনপি। তবে আওয়ামীলীগ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, বিএনপির লোকজন আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে প্রথমে হামলা করে।

ঘটনার বিবরনের জানা যায়, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। হামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজাসহ অন্তত ৫জন আহত হয়। শুক্রবার(২৬শে মে) বেলা সোয়া ১১টার দিকে আওয়ামীলীগের অফিসের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

খাগড়াছড়ি জেলার বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়ার অভিযোগ, শুক্রবার দুপুর ২টায় জেলা বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে পুলিশের সামনে এ হামলা ঘটে। তিনি দাবি করেন, হামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজাসহ ৫নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন পাল্টা অভিযোগ করেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়ি বহর নিয়ে হামলা চালালে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা পাল্টা জবাব দিয়েছে।

গাড়ি বহরে থাকা চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি আবদুল গফুর বলেন, আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের সামনে তাঁদের গাড়ি বহর যাওয়ার সময় কমপক্ষে ২শ আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী হামলা চালায়।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবসার বলেন, হামলায় আবদুল্লাহ আল নোমান রক্ষা পেলেও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য কামরুল হাসান আকাশ, মানিকছড়ি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক স্কুল বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল রানা, পৌর ছাত্রদল নেতা ইফতি আহম্মেদ, সদর উপজেলা বিএনপি কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম, ৩নং ওয়ার্ড সদর পৌর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইফতি হাসান, মানিকছড়ি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক সোহেল রানা, মানিকছড়ি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক স্কুল বিষয়ক সম্পাদক মো: সোহেল রানা, পৌর ছাত্রদল নেতা ইফতি আহম্মেদ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য শেখ রাসেল, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক আরিফ মেহেদীসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হন।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী সন্ত্রাস-নৈরাজ্যেও প্রতিবাদে পূর্বনির্ধারিত শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় বিএনপির গাড়িবহর থেকে কার্যালয়ের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরে পাল্টা-পাল্টি-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের চারজন আহত হয়েছেন।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক জানান, পুলিশ অত্যন্ত সর্তকতার সাথেই দায়িত্ব পালন করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উভয়পক্ষের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক আরো বলেন, ‘বিএনপির গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। কেউ অভিযোগ করেনি। বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। যথেষ্ট পুলিশ পাহারা রয়েছে। হামলার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দিকে ঘটনার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করে। অপর দিকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে। দুপুর ২টায় শহরের চেতনা মঞ্চে আওয়ামীলীগের শান্তি সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থতি বিরাজ করছে।

‘খাগড়াছড়িতে বিএনপির সমাবেশ: ১০দফা এখন সরকার পতনের এক দফা’:

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, সরকার রাজপথ রক্তাক্ত করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। তাদের সে চেষ্টা জনগণের আন্দোলনের মুখে ব্যর্থ হবে। ১০দফা এখন সরকার পতনের এক দফা পরিণত হয়েছে। শুক্রবার(২৬শে মে) বিকেলে খাগড়াছড়ি শহরের মিল্লাত চত্বর সড়কে ১০দফা বাস্তবায়নের দাবিতে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছার, সহ-সভাপতি প্রবীন চন্দ্র চাকমা, যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল মালেক মিন্ট, অনিমেষ চাকমা রিংকু, জেলা যুবদলের সভাপতি মাহবুব আলম সবুজ, জেলা মহিলা দলের সভাপতি কুহেলী দেওয়ান ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদুল হোসেন সুমন।