খাগড়াছড়ির এএসপি মাহমুদা বেগম পেশাগত অবদানের জন্য ‘সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ পাচ্ছেন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(এএসপি) মাহমুদা বেগম পেশাগত অবদানের জন্য ‘সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ পাচ্ছেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ(আইএডব্লিউপি) তাকে এ অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে। কমিউনিটি সার্ভিস ক্যাটাগরিতে তিনি এ অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন।

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে আগামী ১৭-২১সেপ্টেম্বর পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে তার হাতে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হবে। স¤প্রতি এক টুইট বার্তায় এ ঘোষণা দিয়েছে আইএডব্লিউপি।

জননিরাপত্তার উন্নতি, অপরাধ ও অপরাধমূলক আচরণ হ্রাসসহ সামাজিক বৈষম্য নিরসন এবং নিজ বাহিনীসহ সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে অনুকরণীয় ভূমিকা রাখাসহ পুলিশের সুনাম ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হওয়ায় কমিউনিটি সার্ভিস ক্যাটাগরিতে এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এএসপি মাহমুদা বেগম বলেন, ‘কমিউনিটি সার্ভিস’ বিভাগে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ(আইএডব্লিউপি) স্বীকৃতি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছি। এটা সত্যিই আমার জন্য গর্বের, সম্মানের এবং কর্মের মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি ।

‘আইএডব্লিউপি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’-এর জন্য নির্বাচিতরা হলেন-কমিউনিটি সার্ভিস ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম। সাহসিকতা ক্যাটাগরিতে বেডফোর্ডশার পুলিশের কনস্টেবল পাত্রিজিয়া ভেটেরি।

মেন্টরস অ্যান্ড কোচিং ক্যাটাগরিতে জর্জিয়া ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ ইন্সপেক্টর ইভ রোজার। লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে ইউক্রেনের পুলিশ মেজর ওলহা ইউসকেভিচ। প্রিভেনশন অ্যান্ড ডিটেকশন অফ ভায়োলেন্স এগেইনেস্ট ওমেন ক্যাটাগরিতে কেনিয়ার পুলিশ সুপার জিপ্পুরাহ এনদেরিতো।

সিভিলিয়ান অব দ্য ইয়ার দুবাই পুলিশের সিভিল এমপ্লয়ি রিম আল মুহাইরি। এ·িলেন্স ইন পারফরমেন্স ক্যাটাগরিতে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের ডিটেক্টিভ পুলিশ সুপার সিমুন ভান দের ¯øয়িস। হি ফর শি ক্যাটাগরিতে ইন্দোনেশিয়া পুলিশের পুলিশ জেনারেল লিস্টঅও সিগিত প্রাভো।

১৯১৫সাল থেকে নারী পুলিশ কর্মকর্তার মানোন্নয়ন, শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্বজুড়ে কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব পুলিশ উইমেন। ১৯৫৬সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ(আইএডব্লিউপি) নামে সংস্থাটি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

আইএডব্লিউপি আন্তর্জাতিকভাবে পুলিশ নারীদের স্বার্থ রক্ষাসহ মানবাধিকার সুরক্ষিত বিশ্বজুড়ে কাজ করছে। অ্যালিস স্টেবিন্স ওয়েলস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী পুলিশ সদস্য যিনি অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন।

মাহমুদা বেগম ২০১০সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষ শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগদান করেন সিলেট জেলা পুলিশে। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে(সিএমপি) দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী কমিশনার সদর ও ট্র্যাফিক হিসেবে।

সিএমপিতে থাকাকালীন ২০১৩সালে আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে সোয়াত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম। সিএমপিতে থাকা অবস্থায় ২০১৬সালে জাতিসংঘ মিশনে যান তিনি। মিশনে থাকাকালীন একই বছর পদোন্নতি পেযে হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সেখান থেকে ফিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জে।
২০১৯-২০সালের বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ(পিএম স্কলারশিপ) পেয়ে অপরাধবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর(মাস্টার্স) অধ্যয়ন করতে ২০২০সালের ২১শে ফেব্রুযারি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে যান মাহমুদা বেগম।

দেড় বছর অধ্যয়ন শেষে ২০২১সালের ৩১শে আগস্ট অপরাধবিজ্ঞানে মেধাতালিকায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন রাঙামাটি জেলা পুলিশে। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশে।
সিএমপিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কাজ করার সুযোগ পান মাহমুদা বেগম। তৎকালীন ১১ বছর বয়সী একজন ভারতীয় শিশু কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে আসে। সে সময় শিশুটি শুধু নিজের দেশের নাম ভারত ছাড়া আর কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

মাহমুদা বেগম ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সহায়তায় অসহায় ভারতীয় শিশুটিকে ভারতে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রশংসিত হন। এছাড়া নিযমিত বাজার মনিটরিং করে ফরমালিনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে এক সাহসী অবদান রাখেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি থেকে অপরাধ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা এ নারী কর্মকর্তা ব্যক্তিজীবনে এক সন্তানের মা। তার স্বামী গণমাধ্যমকর্মী। কুমিল্লার তিতাসে পৈতৃক বাড়ি হলেও বাবার চাকরির সূত্রে জন্ম চট্টগ্রামে।