খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি, পানছড়িসহ পৃথকভাবে বিভিন্ন উপজেলায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা পালন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি, পানছড়িসহ পৃথকভাবে বিভিন্ন উপজেলায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা পালন করা হয়েছে।

মাটিরাঙ্গা অশোকারমা বৌদ্ধ বিহার থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার বিহারে গিয়ে শেষ হয়। জেলার মাটিরাঙ্গায় বর্ণিল আয়োজনে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার(৪ঠা মে)সকালের দিকে মাটিরাঙ্গা অশোকারমা বৌদ্ধ বিহার থেকে একটি শোভাযাত্রা মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মাটিরাঙা সার্বজনীন গৌতম বৌদ্ধ বিহারে এসে শেষ হয়। মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীর ভক্ত ও দায়ক দায়িকারা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
এদিন ত্রিশরণ গ্রহণ, পঞ্চশীল প্রার্থনা সংঘদানসহ নানাবিধ দান ভিক্ষসংঘের স্বস্তি ভাষণ দিনব্যাপী নানা আয়োজনসহ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনার বিশেষ প্রার্থনা করাা হয়েছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলার সকল বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের আয়োজনে ভদন্ত বিমল তিষ্য স্থবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সুবাস চাকমা।
এ সময় অনুষ্ঠানে অত্র উপজেলার নানা শ্রেণী পেশার বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীর ভক্তবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মহালছড়ি উপজেলা: জেলার মহালছড়ি উপজেলাতে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে পার্বত্য ভিক্ষ সংঘ বাংলাদেশ, মহালছড়ি শাখার কর্তৃক বিশাল ধর্মীয় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার(৪ঠা মে) উক্ত ধর্মীয় মঙ্গল শোভাযাত্রা মহালছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে প্রধান অতিথি জোন অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মো: শাহরিয়ার সাফকাত ভূইয়া(পিএসসি) শুভ উদ্বোধন করেন। এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোনা রতন চাকমা, পার্বত্য ভিক্ষ সংঘ মহালছড়ি শাখার সভাপতি প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথেরোসহ বিভিন্ন বিহার থেকে আগত ভিক্ষ সংঘ ও মহালছড়ির বিভিন্ন গ্রামের দায়ক-দায়িকাগণ।

এছাড়াও মহালছড়ির লেমুছড়ির পটপট্যা ক্লাব মাঠে বিশ্বের সকল প্রাণীর মঙ্গল ও হিতসুখ কামনাই বুদ্ধ মুর্তি দাম, সংঘ দান ও অষ্টপরিষ্কার দান ও ধর্মীয় দেশনা শ্রবণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বিশাল এই শোভাযাত্রাটি মহালছড়ি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে মহালছড়ির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে শেষ হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি তালিকা অনুযায়ী সকল সরকারি ও বেসরকারি অফিস কার্যালয় ও বিভিন্ন সংস্থা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

পানছড়ি উপজেলা: মির্জিবিল সংঘ মৈত্রী বৌদ্ধ বিহার এলাকা থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রাটি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। দিনটি উপলক্ষে নানান কর্মসূচী সাজিয়েছিল পানছড়ির বৌদ্ধ স¤প্রদায়। গৌতম বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত(জন্ম, বোধিজ্ঞান লাভ ও মহাপরিনির্বান) উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি কামনায় আয়োজন হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার।

পার্বত্য ভিক্ষ সংঘ বাংলাদেশ পানছড়ি উপজেলা শাখা ও এলাকাবাসীর আয়োজনে বৃহস্পতিবার(৪ঠা মে) সকাল ৮টা থেকে বিশালাকার একটি শোভাযাত্রা বের হয়। মির্জিবিল সংঘ মৈত্রী বৌদ্ধ বিহার এলাকা থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রাটি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ব্যান্ড পাটির বাজানো ঢাক আর ঢোলের সাথে শোভাযাত্রায় ছিল হাজারো মানুষের মিলনমেলা। তাই রাস্তার দু’পাশে দাড়িয়ে উপভোগের আনন্দে মেতেছিল উৎসুক দর্শনার্থী।

শোভাযাত্রায় অংশ নেয়াদের জন্য জলপান আর ঠান্ডা শরবতের আয়োজন করেছিল, কলাবাগানের মারমা স¤প্রদায়। প্রচন্ড গরমের মাঝে জলপান আর ঠান্ডা শরবতে চুমুক দিয়ে অনেকেই দিয়েছে স্বস্তির হাসি। শোভাযাত্রা পরবর্তী ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, সংঘ মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে। এবারের এই দৃষ্টিনন্দন আয়োজনের পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন, যুগান্তর চাকমা আর সদস্য সচিব ছিলেন পরিমল চাকমা(সুৎপল)।
এ সময় জানা যায়, এই দিনে বুদ্ধপূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেদ প্রার্থনাও করে থাকে।

উল্লেখ্য যে, বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্রতম ধর্মীয় উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। বৈশাখী পূর্ণিমা দিনটি বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত। এই পবিত্র বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ, বোধি বা সিদ্ধিলাভ এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। তাই ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নিকট অতি পবিত্রতম দিন।

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে, মহামানব গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহা পরিনির্বাণ লাভের জন্য প্রতি বছরই বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে পালন করে থাকেন।