খাগড়াছড়ি দীঘিনালার ছবির মানুষ মুকুল ত্রিপুরা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালার ছবির মানুষ মুকুল কান্তি ত্রিপুরা ঊনমানুষ। একসময় খর্বাকৃতি নিয়ে কত বিদ্রূপই না সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। আর এখন? মুকুল বলেন, ‘এখন সবাই আমাকে ভালোবাসে, সম্মান করে।’ মুকুল কান্তি ত্রিপুরার বাড়ি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মায়াফাপাড়া গ্রামে।

২১বছর বয়সী এই তরুণ সপ্তাহে দুই দিন গ্রামের শিশুদের বিনে পয়সায় চিত্রাঙ্কন শেখান। চিত্রকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও অনায়াসে যেকোনো ছবি আঁকতে পারার গুণ তাঁকে পরিচিত করেছে ‘শিল্পী’ হিসেবে। শিল্পী মুকুলের শিল্পের কদর আছে গ্রামের বাইরেও। তাই তো গ্রামের বাইরে কয়েকজনকে আঁকাআঁকি শেখান। তাতে সম্মানিও জোটে।

সে সম্মানির অর্থেই নিজের পড়াশোনার খরচ চলান মুকুল। বর্তমানে তিনি দীঘিনালার কুজেন্দ্র মল্লিকা মডার্ন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। মায়াফাপাড়া গ্রামে যেদিন গেলাম, মুকুল বসে ছিলেন গ্রামের ল²ী নারায়ণ মন্দিরের আঙিনায়। এই মন্দিরে শিশুদের চিত্রাঙ্কন শেখান তিনি।

মুকুল বলেন, ‘আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান, বাবা মহেশ্বর ত্রিপুরা কৃষিকাজ করেন। বামন হওয়ায় সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, খুব কষ্ট পেতাম। প্রতিবন্ধী মানুষেরা সমাজের অভিশাপ নয়, ভালোবাসা পেলে সমাজের জন্য আমরাও ভালো কিছু করতে পারি।’ ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি মনোযোগী মুকুল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কয়েকবার চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।

শখের কাজই ঝালিয়ে নিতে চেয়েছিলেন বলে বাঘাইছড়িমুখ এলাকায় সিএসডি(কনসার্ন সার্ভিসেস ফর ডিজঅ্যাবল) নামে প্রতিবন্ধীদের একটি প্রতিষ্ঠানে যখন এক বছর কারিগরি প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, সে সময় চিত্রাঙ্কনের ওপরও ধারণা নেন।

মুকুল আরো বলেন, ‘২০১৯সালে এসএসসি পাস করার পর গ্রামের শিশুদের বিনা মূল্যে চিত্রাঙ্কন শেখানোর উদ্যোগ নিই। বর্তমানে ১২জনকে সপ্তাহে দুই দিন চিত্রাঙ্কন শেখাই। আমার শিক্ষার্থীরা জেলা-উপজেলায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়।’ শিক্ষার্থীদের কথা বলতে গিয়ে মুখটা উজ্জ্বল হলো মুকুলের। এমন শিক্ষার্থী গড়ার স্বপ্নই তাঁর। তাই তো একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। কারও সহযোগিতা পেলে নিশ্চয় মাকুলের সে স্বপ্ন বাস্তব হবে।