খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলায় জমে উঠেছে আগাম কাঁঠালের হাট।

খাগড়াছড়ির সদর, মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, মানিকছড়ি, রামগড়, গুইমারা, লক্ষাছড়ি উপজেলায় মৌসুম শুরুর আগেই আগাম কাঁঠালে বাজার সয়লাব। মৌসুমের আগে আসে বিধায় ফলের রাজা খ্যাত এ ফলের কদর খুবই বেশি।

জেলা ব্যাপী ম-ম গন্ধ ছড়াচ্ছে আম, কাঁঠাল ও লিচু। বাহারি ফলে ঠাসা মাটিরাঙ্গা বাজার। আর এসব ফলের মধ্যে সব থেকে বড় জায়গা দখল করেছে কাঁঠাল।
খাগড়াছড়িতে সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট বসে সদর উপজেলা ও মাটিরাঙ্গায়। মৌসুমী সব ধরনের ফলের একটা কদর বরাবরই থাকে। তবে যদি সে ফল মৌসুমের আগেই পাওয়া যায় তাহলে চাহিদা তার একটু বেশিই থাকে। পাশাপাশি সবার আগ্রহ থাকে বেশ। এরই মধ্যে জেলা সদরের বড় হাট বাজার বৃহষ্পতিবার হলেও বুধবার থেকে আগাম বাজার বসে যায়।

একইভাবে মাটিরাঙ্গা বাজারে জমে উঠেছে আগাম কাঁঠালের হাট। সপ্তাহের শনিবার হাটবার হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদসহ আশপাশের বিভিন্ন লোকালয় থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা কাঁঠাল নিয়ে আসতে শুরু করেন মাটিরাঙ্গা কাঁঠাল বাজারে। শুক্র ও শনিবার এ দুইদিন মাটিরাঙ্গার বিশাল এলাকাজুড়ে বসে কাঁঠালের হাট।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁঠাল, কলা, আনারস, বেল, তেতুল, পেঁপেঁসহ বাহারি ধরনের ফল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি হচ্ছে।
সাপ্তাহিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগাম কাঁঠালে সয়লাব প্রায় পুরো বাজার। ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসব কাঁচা-পাকা কাঁঠাল পরিবহনযোগে এনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দর-কষাকষি করে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। দাম চড়া হলেও সাধারণ ক্রেতা ও পাইকাররা ভিড় করছেন বাজারে। পাকা কাঁঠালের চাহিদা থাকলেও পরিবহনের সুবিধার্থে কাঁচার চাহিদাই বেশি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, বৃহত্তর নোয়াখালী ও নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই দুই দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁঠাল বোঝাই ট্রাক সমতলে যায়। প্রতি ট্রাকে ২২০০টি কাঁঠাল থাকে।

এদিকে, প্রচন্দ গরম ও রোদ বিধায় কাঁঠালের রং নষ্ট না হওয়ার জন্য কাঁঠালের ওপরে গাছের ঝোঁপঝাড় দেওয়া হয়েছে।
মাটিরাঙ্গা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এবার প্রায় ৫০০হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়। ৩৫মেট্রিক টন পার হেক্টর জমিতে কাঁঠালের লক্ষ্য মাত্রা আবার নির্ধারণ করা হয়। তবে ক্রমাগত খরার কারণে এ বছর কাঁঠালের উৎপাদন কম বিধায় দাম বেশি হাকাচ্ছেন সবাই।

এদিকে তপ্ত গরমের কারণে মৌসুম আসার আগেই কাঁঠাল, লিচু ও আমসহ নানা মৌসুমী ফল এরই মধ্যে পাকতে শুরু করেছে। তাই মাটিরাঙ্গা বাজারে প্রতিদিন কাঁঠাল বাদে আম, লিচু বাজারে সয়লাব বলে মনে করছেন মাটিরাঙ্গা কৃষি অফিস।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহাজাহান বলেন, আমি পেশাগতভাবে বিভিন্ন ফলের ব্যবসা করি। বাগান ক্রয় করে ক্রমাš^য়ে সুবিধাজনক সময়ে বিক্রি করি। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিটা কাঁঠালের দাম ৩০-৪০টাকা বেশি। ৫০টাকার নিচে কোনো কাঁঠালে নাই। ১০০কাঁঠালেন দাম ১৫-২০হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুসলিমপাড়ার আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কবির বলেন, আমি এবার মাটিরাঙ্গায় ১০লাখ টাকার কাঁঠাল বাগান ক্রয় করেছি। কাঁঠালের দাম বেশি বিধায় লাভবান হবো বলে মনে করছি। তবে বিভিন্ন স্থানে খরচ বেশি বিধায় মনে ভয় কাজ করছে।

কাঁঠাল বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, তবলছড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে আগাম কাঁঠাল বাগান ক্রয় করে থাকি। তবলছড়ি থেকে পিকআপযোগে কাঁঠাল নিয়ে এসেছি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া দাম ভালো হওয়ায় লাভও বেশি হচ্ছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মাটিরাঙ্গার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় এখানে প্রায় বারো মাসই কাঁঠাল জন্মে। এখন বাজারে যেসব কাঁঠাল আসছে তা পুরোপুরি পরিপক্ক হয়নি। বেশি টাকা পাওয়ার আশায় চাষিরা অপরিপক্ক কাঁঠাল বিক্রি করে দিচ্ছে। সাধারণত কাঁঠাল পাকা শুরু করে জুন থেকে। তবে এবার কাঁঠালের ভাল ফলন হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ে লাভবান হচ্ছেন।