গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ভূমিহীন মুক্ত ঘোষনা বাতিল করে জমিসহ ঘর চায় ভূমিহীন পরিবার

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী পালন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আশ্রয়হীন ও ভূমিহীনদের ২ শতক খাস জমিসহ
সেমিপাকা ঘর করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘরের চাবি ও দলিল আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করছেন। সরকারের বিধি মোতাবেক ভূমিহীনদের তথ্য
যাচাই না করে ২০২২ সালের (২১ জুলাই) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাকে প্রশাসন ভূমিহীন মুক্ত ঘোষনা করে।

এর প্রতিবাদে ভূমিহীনেরা ৬ মার্চ বিক্ষোভ ও সমাবেশ
করে মুজিববর্ষের জমিসহ ঘরের দাবীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বারকলিপি দিয়েছে। (১০ মার্চ) জেলা প্রশাসক ভূমিহীন নেতা উপজেলা ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি এম এ মতিন মোল্লার কাছে চেয়ে বসেন ভূমিহীনের তালিকা। (১৯ মার্চ) পৌরসভাসহ
১৭ টি ইউনিয়ন থেকে প্রায় ১৬ শ’ ভূমিহীনের তালিকা জেলা প্রশাসক অলিউর রহমানের কাছে জমা দেন ওই ভূমিহীন নেতা।

উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে এই উপজেলায় মুজিববর্ষের জমি ও ঘর চেয়ে ৮৫০ টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য তৎকালিন ইউওনো রামকৃষ্ণ বর্মন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ন প্রকল্প পরিচালক বরাবর চাহিদা প্রেরণ করেছিলেন। সেই চাহিদা
মোতাবেক ৩ দফায় ৮৫০ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ইউএনও আরিফ হোসেন সরকারী বিধি অনুযায়ী প্রচার-প্রচারনা ও ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এলাকায় মাইকিং না করে উপজেলাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভূমিহীন মুক্ত ঘোষনা করেন। এতে কয়েক হাজার ভূমিহীন পরিবার বঞ্চিত হয়েছে মুজিববর্ষের জমি ও ঘর থেকে।

তথ্যঅনুসন্ধানে জানা গেছে, আশ্রয়হীন ভূমিহীন পরিবারের বাস্তবকিছু চিত্র। উপজেলার দেল্লা গ্রামের মৃত ঘুনু শেখের স্ত্রী মোছা. জোবেদা বেওয়া (৮১), ওই
গ্রামের কৃষক হায়দার আলীর জমিতে রাস্তার ধারে ঝুপড়ি ঘরে ৩০ বছর ধরে বাস করছে। পৌরসভার গো-হাটি পাড়া মহল্লার মৃত আবু বক্করের স্ত্রী মোছা. আমেনা
বেওয়া (৬৮), অসুস্থ্য ছেলেকে নিয়ে শাহিনুর রহমানের পুকুর পারে ২৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে বাস করছে। একই মহল্লার মৃত সাদা মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ রাহেনা বেওয়া
(৬৫), মকবুল মিয়ার পুকুর পারে ছোট্ট একটি কুঠরি ঘরে ২৩ বছর ধরে বাস করছে।

আরজি খলসি গ্রামের মৃত মেহের আলীর ছেলে আব্দুর রহমান (৭০), জরিপপুর গ্রামের গার্মেন্টস কর্মি ইউনুছ আলীর বাড়ীতে ৩৫ বছর ধরে আশ্রয় নিয়ে আছে।
গোবিন্দপুর মহল্লার মৃত বসু দেবের ছেলে শ্রী সুকমল চন্দ্র দাস কানু (৭৪), উপজেলা হাসপাতাল সংলগ্ন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সালজার রহমানের বাড়ীসহ বিভিন্ন ভাড়া বাসায় ৫০ বছর ধরে আছেন। কাটাবাড়ী বেগুনবাড়ী গ্রামের মৃত মাজেদুল্লাহ’র ছেলে একাব্বর আলী (৭০), কুঠারপাড়া গ্রামের ডা. আব্দুল বাকী সরকারের বাড়ীর উঠানে আশ্রয় নিয়ে আছে। শালমারা গ্রামের মৃত মছলেম মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া
(৫৬), ওই গ্রামের গামের্ন্টেস কর্মি সোহান মিয়ার বাড়ীতে পরিবার নিয়ে থাকেন।

এরকম অসংখ্য ভূমিহীন মানুষ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অন্যের জমিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। এদের কোন জমিজমা নেই। তাদের দাবী শেখের বেটি
ভূমিহীনদের জন্য জমি ও ঘর দিচ্ছে। অবিলম্বে ভূমিহীন মুক্ত ঘোষনা বাতিল করে খাসজমিসহ ঘর দিয়ে তাদের পূর্ণবাসন করা হোক। যাতে দিন শেষে সেই ঘরে রাতে
বিশ্রামের স্বস্থির নিঃস্বাষ নিতে পারেন, এটাই তাদের প্রত্যাশা।

ভূমিহীন নেতা উপজেলা ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি এম এ মতিন মোল্লা বলেন, উপজেলা প্রশাসন সরকারী বিধি মোতাবেক এলাকা ভিত্তিক মাইকিং প্রচার-প্রচারনা না
করেই উপজেলাকে ভূমিহীন মুক্ত ঘোষনা করেছে। এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ভূমিহীনের তালিকা চেয়ে ছিলেন, তা জমা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা ইউওনো আরিফ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ভূমিহীনের তালিকা উপজেলায় এসেছে, তা যাছাই বাছাই করা হবে।