খাগড়াছড়ি বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ ৩শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের পাল্টা মামলা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের জেরে জেলা বিএনপি ও আওয়ামীলীগের পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় উভয়ে প্রায় সাড়ে ৬শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে খাগড়াছড়ি শহরে ফের উত্তেজনা বিরাজ করছে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান বাদী হয়ে সোমবার (২৯শে মে) দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছারসহ ১১০জনের নাম উল্লেখসহ আরো দেড় থেকে দুই শতাধিক অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আরিফুর রহমান মামলার কথা স্বীকার করলেও আসামিদের জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

এ দিকে খাগড়াছড়িতে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা নোমানের গাড়ি বহরে হামলা ও নেতাকর্মীদের মারধরের অভিযোগ এনে শতাধিক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীর নামে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। জেলা সদরের দক্ষিণ গঞ্জপাড়ার বলপিইয়ে আদামের মৃত সুরেশ ত্রিপুরার ছেলে বিএনপি নেতা রতন ত্রিপুরা নামের এক বিএনপি কর্মী।

রোববার (২৮ মে) দুপুরে খাগড়াছড়ি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে এ অভিযোগটি দায়ের করেন তিনি। অভিযোগে খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতিসহ তিন সাংবাদিকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার খাগড়াছড়িতে জেলা বিএনপি আয়োজিত প্রোগ্রামে যোগ দিতে আসা কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের গাড়ি বহরে হামলা ও নেতাকর্মীদের মারধরের অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগটি দায়ের করেন বিএনপি নেতা রতন ত্রিপুরা। এতে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেনকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও ৩জন সাংবাদিকসহ ১০৩জন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখসহ দুই শতাধিক অজ্ঞাত অভিযুক্ত রয়েছে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট মো: ফরিদ আলম এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করতে সদর থানাকে নির্দেশ দেন।

গতকাল রোববার (২৮শে মে) দুপুরে খাগড়াছড়ি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ ওমর ফারুক সুজনের আদালতে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক রতন কুমার ত্রিপুরা বাদী হয়ে একটি মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেনকে প্রধান করে ১০৩জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত আড়াই শতাধিক আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এছাড়াও মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীকে হুকুমের আসামি করা হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট বেদারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চত করে বলেন, আমলী আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এজাহার হিসেবে গণ্য করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আরিফুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোন নির্দেশনা পাইনি।

অভিযোগপত্রে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, দপ্তর সম্পাদক চন্দন কুমার দেসহ ৩জন সাংবাদিককেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন, দৈনিক খোলা কাগজ ও দি এশিয়ান এইজের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি নুরুল আজম, দৈনিক বাংলার খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ও দীঘিনালা সাংবাদিক ফোরামের আহ্বায়ক আবদুল জলিল ও দৈনিক তৃতীয় মাত্রার প্রতিনিধি মিজানুর রহমান সবুজ।

এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে সাংবাদিক মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, ঘটনার দিন আমি পেশাগত কাজে দীঘিনালায় ছিলাম। অথচ জেলা সদরের ঘটনায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।

ঘটনার দিন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম ইসমাইল হোসেন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশের প্রস্তুুতি চলাকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে হামলা চালায়। এতে আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহতও হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৬শে মে খাগড়াছড়িতে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে আওয়ামীলীগের অফিসের সামনে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজাসহ অন্তত ৫জন আহত। তবে জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক কেএম ইসমাইল অভিযোগে জেলা আওয়ামীলীগ অফিসের সামেনে গাড়ি বহর যাওয়ার সময় জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দরা হামলা করে। এ ঘটনায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পরস্পরকে দায়ী করেছে।