খাগড়াছড়ির বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু এখন বিনোদন কেন্দ্র

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা রামগড় উপজেলায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের মহোৎসবে শামিল হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তখন আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের ফেনী নদীর উপরে নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী-১ সেতুটির উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

শুক্রবার (৫ মার্চ) রামগড়ের মহামুনি মৈত্রী সেতু-১ পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, সেতুটি উদ্বোধন হলেও সেতুর কার্যক্রমে আরো আনুষ্ঠানিকতা রয়ে গেছে। সেতুটির ফলে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে অনেক অগ্রগতি সৃষ্টি হবে। পররাষ্ট্র সচিব তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাথে আলোচনা হয়েছে। আগামী ১৬ই মার্চ ভারতের পানি সম্পদ সচিবের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে এরপরেই দুই দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রীদের বৈঠক হবে। আমরা আশাবাদী বৈঠকগুলি হলেই তিস্তাসহ ৬টি নদীর ব্যাপারে একটা অগ্রগতি হবে।

পরিদর্শনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের গোয়েন্দা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আতিকুর রহমান, চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মো: সাইফুল আবেদীন, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন, রামগড় জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল আনোয়ারুল মাযহারসহ পদস্থ কর্মকর্তারা।

এদিকে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু এখন বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু। পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার বাংলাদেশ-ভারতের প্রথম মৈত্রী সেতু-১ এর কাজ ইতি মধ্যে শেষ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

প্রতিদিন দুরদুরান্ত থেকে বহু মানুষ দেখতে আসেন এই সেতু। সেতুটি শুধু দু’দেশের সম্পর্ক স্থাপন করেনি, রীতিমত এটি এখন রামগড়ের একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

২০১৫সালের ৬ই জুন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। ১২৮কোটি ৬৯লাখ ভারতীয় রুপি মুদ্রায় নির্মিত মৈত্রী সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪১২মিটার। শুধু খাগড়াছড়ি জেলা নয়, জেলার বাইরে থেকেও প্রতিদিন অনেক মানুষ দেখতে আসেন এ সেতু। বেড়াতে আসা পর্যটকদের দাবি, সেতু ও স্থল বন্দর চালু হলে যেন দু’দেশের মানুষের জন্য এখানে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।

রামগড় বাসীদের প্রত্যাশা সেতু ও স্থল বন্দরটি চালু হলে রামগড় তথা খাগড়াছড়ি জেলার আথর্-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। দেশের বাণিজ্য প্রসারের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন হবে। এ সেতু ও স্থল বন্দর চালু হলে খাগড়াছড়ি জেলার ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের সময় সহজে যোগাযোগ মাধ্যম পুরাতন মহকুমা শহর রামগড় ফিরে পাবে পুরানো ঐতিহ্য।

খাগড়াছড়ির ব্যবসায়ী সুমন মল্লিক ও ঠিকাদার অনন্ত ত্রিপুরা বলেন, সেতুটি দেখতে রামগড়ে এসেছি। এতদিন দু’টি সীমান্তে দূরত্ব থাকলেও এখন সেতুটি দু’দেশের যোগাযোগ এক করেছে। দু’দেশের সম্প্রীতির মেলবন্ধন আরও গভীর হবে।

অপর দর্শনার্থী ফারুক আহম্মেদ ও আশরাফ আলী বলেন, রামগড় পার্বত্য অঞ্চলের পুরাতন মহকুমা শহর। রামগড়ের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। তবে সময়ের পরিক্রমায় উপজেলাটি জৌলুস হারাতে বলেছিল। মৈত্রী সেতু রামগড়ের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। সেতুটি শুধু দু’দেশের সম্পর্ক স্থাপন করেনি বরং এটি এখন এ জেলার একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, ভারত সরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে যে সহযোগিতা করেছিল এ সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ তা মনে রাখবে। এটি দু’দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধিসহ আত্ম-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।

স্থানীয়দের দাবি, সেতুটি ঘিরে দু’দিকে যেন দর্শনার্থীদের জন্য বিনোদন কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়।

উল্লেখ্য যে, ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশ চন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত¡াবধানে ৮২.৫৭ কাটি টাকা ব্যয়ে রামগড়ের মহামুনিতে ২৮৬একর জমির উপর ৪১২মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮০মিটার প্রস্থের আন্তর্জাতিক মানের মৈত্রী সেতুটি গত ২০১৭সালের ২৭শে অক্টোবর থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে দীর্ঘ ৩বছর পর গত জানুয়ারীতে নির্মাণকাজ শেষ করে। ১২টি পিলার সংবলিত সেতুটির বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি এবং ভারতের অংশে চারটি পিলার। যাতে স্প্যান রয়েছে ১১টি। এর বাংলাদেশ অংশে সাতটি ও ভারত অংশে চারটি। নদীর অংশে ৮০মিটারের স্প্যান এবং নদীর দু’পাড়ের ৫০মিটারের দু’টিসহ মোট ১৮০মিটার দৈর্ঘ্যের এ তিনটি স্প্যানই হচ্ছে সেতুর মেন স্প্যান।

প্রসঙ্গত, ২০১০সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের মধ্যে ট্রানজিট সুবিধা, যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর করা এবং আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫সালের ৬ই জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ফেনী নদীর উপর নির্মিত সেতুটির শিলান্যাস করেন। ২০১৭সালের ২৭শে অক্টোবর থেকে মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতুর কাজ শেষ হয়েছে, এখন কেবল উদ্বোধনের পালা। সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুমবাসী।