খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ি বেলে সয়লাব

খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলার সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় গাছের ডালে ডালে ঝুলে আছে বেল। পাকা বেলের সুগন্ধে মাতাল পাহাড়।

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে বেল গাছ পাহাড়ের এত অপরুপ সুন্দর্য্য ছড়ানোর পাশাপাশি এতদঅঞ্চলের বসবাসরত পাহাড়ী-বাঙালি’র জীবিকা অর্জনে বেশ ভুমিকা রাখছে।

বেলের খোসা কাঠের মত শক্ত হওয়ায় ইংরেজিতে ‘ডড়ড়ফ অঢ়ঢ়ষব’ বলা হয়। আর বাংলায় ফলটির ব্যাপক কদর দেখে ব্রিটিশরা এর নাম দিয়েছে ‘ইবহমধষ ছঁরহপব’। বেল গাছ বড় ধরনের বৃক্ষ যার উচ্চতা প্রায় ১০-১৬মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। শীতকালে এ গাছের সব পাতা ঝরে যায়, আবার বসন্তে নতুন পাতা আসে। পাতা ত্রিপত্র যুক্ত, সবুজ, ডিম্বাকার, পত্রফলকের অগ্রভাগ সূঁচাল। ফুল হালকা সবুজ থেকে সাদা রঙের।

বেল শুধু সুস্বাদু ফলই নয়, এর নানা ঔষধি গুণও আছে। বেলে প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি কমপ্লে·, ক্যালসিয়াম ও লৌহ আছে। পাকা ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং কাঁচা ফল কলেরা ও আমাশয়ে উপকারী। বেলের পাতা ও ছাল দিয়ে কবিরাজি ওষুধ তৈরি করা হয়ে থাকে।

মাটিরাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি বেল উৎপাদন হয় বিভিন্ন পাহাড়ি পল্লীতে। মাটিরাঙ্গার দুর্গম পাহাড়ি পল্লী ব্যাঙমারার কৃষ্ণ কুমার ত্রিপুরার বাড়ির আঙিনা জুড়ে বেল গাছ। যেখানে ঝুলছে সবুজ আর হালকা হলুদ বেল। বর্তমানে তার বাড়ির আঙিনায় প্রায় ২০টিরও অধিক বেল গাছ রয়েছে।

মাটিরাঙ্গার বাইল্যাছড়ি, মুসলিম পাড়া, তবলছড়ি, তাইন্দংসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতি হাটবারের দিন উঠছে বেল। বর্তমানে শীত শেষে গরমের আগমন ঘটতে শুরু করেছে। এই গরমে তৃষ্ণা নিবারণে বেলের শরবতের জুড়ি নেই। সে কারণে গরম বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেলের চাহিদা।

একাধিক পাইকারের হাত ধরে পাহাড়ের এসব বেল যাচ্ছে ঢাকা চট্টগ্রামসহ সমতলের বিভিন্ন জেলায়। এসব বেল বিক্রি করে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার খরছ বহন করে আসছেন।

শনিবার মাটিরাঙ্গা হাটের দিন বাজার গুড়ে দেখা যায়, বস্তাভর্তি বেল বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসেন কৃষকরা প্রতিটি বস্তায় প্রায় ১৭০/২০০টি বেল থাকে। প্রতি হাটে প্রায় ১৫০থেকে ২০০বস্তা বেল বিক্রি করা হয়। আকার ভেদে প্রতিটি বেল ১৩টাকা থেকে ১৬টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।

চট্রগ্রাম থেকে আসা বেল ব্যবসায়ী কামরুল মিয়া জানান, ২যুগেরও অধিক সময় ধরে মাটিরাঙ্গায় বেল ব্যবসা করছি। চাষিদের কাছ থেকে ১০০বেল, ১৩০০থেকে ১৫০০টাকায় কিনে নিই। ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুরে বেল নিয়ে বিক্রি করি। পরিবহনের খরচ বাদে যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসারের ব্যায় বহন করি।

স্থানীয় পাইকার মো: আকবর আলী জানান, গাছ থেকেই একটি কাঁচা বেল ৮থেকে ৯টাকায় আর পাকা বেল ১২থেকে ১৫টাকা দরে কিনতে হয়। যা ঢাকায় নিয়ে বাজারজাত করা হয় দ্বিগুনেরও বেশি দামে। তাই সস্তায় বেলের খোঁজে অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ছে মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন জনপদে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূত্র জানায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় বেল আবাদকৃত জমির পরিমাণ ৩৫হেক্টর উৎপাদন ১৩০মেট্রিক টন।

মাটিরাঙ্গা কৃষি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: আমির হোসেন বলেন, মাটিরাঙ্গায় বেল ব্যাপক সম্ভাবনাময় ফল, বাণ্যিজিকভাবে বেলের আবাদ শুরু করা হলে এই অঞ্চলে বেলের চাহিদা শেষে সমতলে এর সরবরাহ করা সম্ভব। বেলের বাগানে বেশি যতেœর প্রয়োজন হয় না। তাই চাষিরা বেলের বাগান করে লাভবান হবার সুযোগ রয়েছে।