খালেদার লন্ডন সফরে প্রার্থীদের মনোনয়ন ভাগ্য নির্ধারণ

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খুব শিগগিরই লন্ডন যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসা শেষে সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সাংগঠনিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের ব্যাপারে বিএনপির এই দুই হাইকমান্ড বেশকিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ফলে দলীয় প্রধানের লন্ডন সফরকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছে দলটির নেতাকর্মীরা।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, একাদশ নির্বাচনের আগে দলের দুই হাইকমান্ডের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লন্ডন সফরে ‘খালেদা-তারেক’ বৈঠকের মাধ্যমে পরবর্তীতে সাংগঠনিক পদক্ষেপগুলো চূড়ান্ত হতে পারে। নির্বাচনেরও বেশি সময় বাকি নেই, ২০১৮ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর আগে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় ও দলীয় প্রার্থী বাছাইসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বিএনপির।

এছাড়া দলের কিছু নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া না-দেওয়ার ব্যাপারে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপি প্রধান। কারণ বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে তারেক রহমান সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। তাই কারা রাজপথে ছিল এর তথ্যও তার কাছে আছে। ফলে লন্ডনে ‘খালেদা-তারেক’ এর বৈঠকে কিছু নেতার ‘ভাগ্য নির্ধারণ’ হবে। আবার কারো কারো ‘ভাগ্য খুলতে’ পারে এমনটা মনে করেন দলের কেউ কেউ।

খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা থাকলেও সরফসূচি চূড়ান্ত হয়নি এখনও। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলার আগামী ৬ জুলাই খালেদা জিয়ার হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিনের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে কবে নাগাদ তিনি লন্ডনে যাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘ম্যাডাম লন্ডন সফরে যাবেন শুনেছি।’

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে যাওয়ার কথা স্বীকার করছেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম লন্ডন যাবেন, তবে কবে যাচ্ছেন তা বলতে পারছি না। হয়ত শিগগিরই যাবেন।’

খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু জানাতে চান না দলের নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রধান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাচ্ছেন এর বাইরে কিছুই নয়। আবার কেউ কেউ বলছেন, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার সঙ্গে আলোচনা করে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন খালেদা জিয়া এটাকে ভিন্নভাবে দেখার কিছু নেই।

বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘ম্যাডাম চিক্যিসার জন্য লন্ডন যাবেন। ওনার চোখের অবস্থা খুব খারাপ, পায়েও সমস্যা আছে। এটা রুটিন চেকাপেরই অংশ এর আগেও তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন। তখনই ডাক্তারের পরামর্শ ছিল আবার লন্ডনে যাওয়ার।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেখানে আছেন কিছু রাজনৈতিক আলাপ হতেই পারে। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করাসহ সাংগঠনিক কিছু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।’

এছাড়া ছাত্রদলের সহ সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমাদের নেত্রী লন্ডন সফরে যাবেন। অনেকদিন পর ওনার ছেলে সঙ্গে দেখা হবে এটা একটা আনন্দঘন মুহূর্ত। দলের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক পরামর্শ সেটাও হবে।’

তিনি বলেন, ‘তিনি (তারেক রহমান) যেহেতু দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড সেহেতু ম্যাডাম ওনার সাথে আলাপ আলোচনা করে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার এটি তৃতীয় সফর হবে। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দেশে ফেরার পথে বড় ছেলে তারেক রহমানকে দেখতে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তিনি। এর পর ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর একবার তিনি লন্ডন যান। ওই সময় চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন তিনি। দুই মাসের বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান করে ২১ নভেম্বর দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা) হুলিয়া নিয়ে গত প্রায় ৯ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে রয়েছেন।-প্রতিবেদন পরিবর্তন ডটকমের সৌজন্যে প্রকাশিত।