চট্টগ্রামে সোনার বার উদ্ধার, মামলা নিয়ে দুই তদন্ত সংস্থার টানাটানি

কর্ণফুলী থানায় হওয়া এ মামলার তদন্তভার নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গেছে। মামলাটি নিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চিঠি দিয়েছে। তবে মামলা দিতে নারাজ ডিবি। এ অবস্থায় মামলার তদন্ত ও গন্তব্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় সোনা ব্যবসায়ী সমিতির দুই নেতার নাম এসেছে। তবে তারা তা অস্বীকার করেছেন।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,গত ১৬ জুন সিএমপির কর্ণফুলী থানা পুলিশ মইজ্জারটেক এলাকায় চেকপোস্ট পরিচালনা করে। ওই চেকপেস্টে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামমুখী মারসা পরিবহণের যাত্রীবাহী একটি বাসে অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ। দুই নারীর শরীরে তল্লাশি করে ৮২০ ভরি বা ৯ হাজার ৫৭০ গ্রাম ওজনের সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এগুলো বিশেষ কায়দায় শরীরে বেঁধে পাচার করা হচ্ছিল। জব্দ সোনার বাজার মূল্য ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন-নয়ন ধর ওরফে নারায়ণ এবং টিপু ধর ওরফে অলোক, নয়নের স্ত্রী বসুন্ধরা ওরফে জুলি ও তার কাকি কৃষ্ণা ধর ওরফে গীতা ধর। তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, কক্সবাজারের শ্যামা জুয়েলার্স থেকে সোনার বার নিয়ে চট্টগ্রামে পাপ্পু নামে হাজারী গলির এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দিতে নয়নকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুলিশের চোখ এড়াতে স্ত্রী ও স্বজনদের ব্যবহার করে নয়ন সোনার এ চালান নিয়ে আসছিল। তারা কেবল বহনকারী।

এ কাজের জন্য তাদের ৫-১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এর আগেও তারা এভাবে চালান পৌঁছে দিয়ে পাপ্পুর কাছ থেকে ৫-১০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। এ ঘটনায় ১৭ জুন কর্ণফুলী থানায় মামলা হয়। এর তদন্তভার দেওয়া হয় উপপরিদর্শক মেহেদী হাসানকে। তিনি দুই আসামি নয়ন ও টিপুকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা পাপ্পু ও শ্যামা জুয়েলার্সের নাম বলেন। ১০-১২ দিন পর মামলাটি তদন্তের জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি উপপরিদর্শক রবিউল ইসলাম দুই আসামি নয়ন ও অলোককে আবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। রবিউল ইসলাম সাংবাদিক’কে বলেন, তদন্তে তিনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। সোনা চোরাচালানের সঙ্গে কক্সবাজার, মিয়ানমার ও হাজারী গলির বিশাল চোরাচালান সিন্ডিকেট জড়িত।

হাজারী গলির ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম মহানগর বুলিয়ন সমিতির সভাপতি বিধান ধর এবং একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ কর্মকারের নাম এসেছে। চট্টগ্রাম মহানগর বুলিয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ কর্মকার সাংবাদিক’কে বলেন, পুলিশের একটি মহল এ মামলায় আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। নির্যাতন করে আসামিদের মুখে আমাদের দুজনের নাম বলানো হয়েছে। অথচ থানা পুলিশ রিমান্ডে নিলেও সেখানে আসামিরা আমাদের নাম বলেনি।

আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। সত্যিকার অর্থেই যারা এ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে ডিবিতে মামলাটির তদন্ত চললেও এটি হস্তান্তরের জন্য চিঠি দিয়েছে পিবিআই। সিএমপি কমিশনার বরাবর পিবিআই-এর অতিরিক্ত আইজির পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ওসমান গণি ১০ আগস্ট চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, মামলাটি পিবিআই-এর শিডিউলভুক্ত এবং এটি পিবিআই তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একইভাবে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও মামলাটি হস্তান্তরের আদেশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের সুপার নাঈমা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের বিভিন্ন সংস্থায় তদন্তাধীন যে কোনো মামলার তদন্তভার পিবিআই চাইতে পারে। এর বিধানও আছে। কর্ণফুলী থানার আলোচ্য সোনা চোরাচালান মামলার তদন্তভারের হস্তান্তর চেয়ে চিঠি দেওয়া হলেও ডিবি তা কার্যকর করেনি।

এ প্রসঙ্গে প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান সাংবাদিক’কে বলেন, ‘মামলাটি স্পর্শকাতর। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেটা ভালো মনে করেছেন, সেটা করেছেন। এতে আমার বলার কিছু নেই।’ মামলার বর্তমান তদন্তকারী ডিবির উপপরিদর্শক রবিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে, আসামি শনাক্ত হয়েছে, মালামাল উদ্ধার হয়েছে, আসামি আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছে। তাই এটি আর হস্তান্তরের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেজন্য হয়তো মামলাটি আর পিবিআইতে দেওয়া হয়নি।