জার্মানিতে ভিক্ষে করেও পদক জিতলেন ভারতীয় অ্যাথলেট!

প্যারা-অ্যাথলেট তিনি। সাঁতারু। পুরোপুরি অন্ধ। কাঞ্চনমালা পান্ডে জানেন কিভাবে স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতরে লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়। কিন্তু এবার ভারতীয় ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের অবহেলায় রীতিমতো দিক হারিয়ে ফেললেন। বার্লিনে প্যারা সুইমিং প্রতিযোগিতায় গিয়ে ভিক্ষার হাত বাড়াতে হলো একেবারে অপরিচিত এক পরিবেশ পরিস্থিতিতে। তবু হার মানেননি। ভিক্ষে করেই দিন গুজরান সুইমিং পুলের নীল জলে নেমেছেন। তারপর সেখান থেকে একটি রূপার পদকও তুলে এনেছেন। যে সাফল্য তাকে ভারতের একমাত্র নারী সাঁতারু হিসেবে এই বছরের ওয়ার্ল্ড প্যারা সুইমিং চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা এনে দিয়েছে।

এসইলেভেন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা করেন ২৬ বছরের কাঞ্চনমালা। ৩ থেকে ৯ জুলাই বার্লিনের এই প্রতিযোগিতায় তিনি ও আরো ৫জন সাঁতারু এসেছেন। শেষ মুহূর্তে তাদের কাছ থেকে পিছটান দিয়েছিল প্যারা অলিম্পিক কমিটি অব ইন্ডিয়া (পিসিআই)। জার্মানির রাজধানীতে পৌঁছে টাকা পাবেন জানতেন তারা। কিন্তু সরকারী টাকা আর তাদের কাছে পৌঁছায়নি রহস্যময় কোনো কারণে।
কিন্তু দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গেছেন কাঞ্চনমালারা। যাদের চোখে আলো থাকে না মনের আলো বুঝি তাদের খুব বেশি থাকে! কাঞ্চনমালা দৃঢ় প্রত্যয়ে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। কাঞ্চনমালার সাথে এই লড়াইয়ে সায়াশ যাদবও একটি রূপা জিতেছেন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছেন।

সেই ছোট্টকাল থেকে প্রতিভাবান সাঁতারু কাঞ্চনমালা। অনেক আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও রাজ্য পদক জিতেছেন এইটুকু বয়স থেকে। দৃষ্টিহীন হয়েও পুরোপুরি দৃষ্টিসম্পন্নদের সাথেও সাফল্যের সাথে লড়ার কাহিনী আছে তার। সব পর্যায়েই। ৯টি আন্তর্জাতিক পদক তার ঝুলিতে। ২০০৬ কমনওয়েলথ গেমস থেকে শুরু করে এশিয়ার নানা পর্যায়ে লড়েছেন। ভারতের জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ে সবসময়ই তিনি সোনা জেতা সাঁতারু।

অথচ গত বছরের রিও প্যারা অলিম্পিক ভারতকে এনে দিয়েছিল তাদের ইতিহাসের সেরা সাফল্য। দুটি সোনা, একটি রূপা ও একটি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন তাদের অ্যাথলেটরা। কৃতি এই প্যারা অ্যাথলেটদের নিয়ে ভারতে তখন মাতামাতি নেহাত কম হয়নি। ভিক্ষের টাকা হয়তো ফেরৎ দিতে হবে না। কিন্তু এই আসরে অংশ নিতে দরিদ্র দৃষ্টিহীন কাঞ্চনমালা যে এর মধ্যে ৫ লাখ রুপি ধার করে ফেলেছেন। খরচও হয়ে গেছে অনেক টাকা।

সরকারের কাছে থেকেও কাঞ্চনমালা প্রাপ্য টাকা পাওয়ার কোনো আশ্বাস পাননি। একদিকে লজ্জা, আরেক দিকে দেশের পতাকা তুলে ধরার গৌরব, অন্যদিকে ধার করা টাকা শোধের দুশ্চিন্তা। নানামুখী এইসব ব্যাপারে কাঞ্চনমালা বড় ক্লান্ত। বড় শ্রান্ত। কিন্তু সব অবস্থায় লড়াকু বলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জায়গা করে নেওয়ার যোগ্যতা তার শান্তির ঘুমটা পুরোপুরি কেড়ে নিতে পারেনি।