তরিকুলের শেষ বিদায়ে লাখো মানুষ

দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শেষ বিদায় নিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম।
সোমবার যশোরে শেষ জানাজার পর কারবালা কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিককে দাফন করা হয়। বাদ আসর যশোর ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা হয়। জানাজায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষ অংশ নেন।

এর আগে সোমবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রথম দফা, পরে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নয়াপল্টনের জানাজায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদসহ দলের ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। পরে তার কফিনে শ্রদ্ধা জানান দলের নেতারা।
রবিবার বিকালে নানা রোগে আক্রান্ত তরিকুল ইসলাম রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান।

ঢাকার জানাজা শেষে বিকাল ৩টার দিকে যশোর শহরের ঘোপের নিজ বাড়িতে নেয়া হয় তরিকুল ইসলামের মরদেহ। সেখান থেকে শহরের লালদিঘী পাড়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেয়া হয়। এখানে তাকে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানান।

এরপর তরিকুল ইসলামের মরদেহ নেয়া হয় যশোর ঈদগাহ মাঠে। সেখানে লাখো অশ্রুসিক্ত জনতা তাদের প্রিয় নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

তরিকুলের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত একদিনের শোক পালন করে বিএনপি। সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেরুল হক সাবু জানান, বৃহত্তর খুলনা বিভাগে বিএনপির অভিভাবক ছিলেন তরিকুল ইসলাম। তার মুত্যুতে জেলা বিএনপি তিন দিনের শোক পালন করছে। সোমবার সবাই কালো ব্যাচ ধারণ করেছে। আগামী দুই দিন দোয়া মাহফিল ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

তরিকুল ইসলাম যশোর সদর থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আসার আগে তিনি দলের ভাইস-চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। যশোর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যানও ছিলেন তরিকুল ইসলাম।
দোয়া চাইলেন তরিকুলপুত্র অমিত

জানাজার আগে তরিকুল ইসলামের ছোট ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘আমার বাবা সারাজীবন আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে তিনি তার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন নিজের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার। দলের নীতি, আদর্শ এবং সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি কখনো যাননি। তারপরও আমার বাবার কথাবার্তা, আচার-আচরণে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। দোয়া করবেন তার সন্তান হিসেবে আমরাও যেন দল, দেশ এবং মানুষের সেবা করতে পারি।’
তরিকুলের চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি

বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘তরিকুল ইসলাম আমাদের মাঝ থেকে চলে গিয়ে আমাদেরকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছেন। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ও দলের কঠিন সময়ে তিনি চলে গেছেন। তার এই চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি।’

ফখরুল বলেন, তরিকুল ইসলামকে হারিয়ে দল একজন প্রজ্ঞাবান নেতাকে হারাল। তরিকুল ইসলাম দল ও দেশের জন্য কাজ করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য সংগ্রাম করেছেন। অন্যায়ের সঙ্গে কখনো তিনি আপস করেননি। ফলে দল হারালো উচ্চমানের প্রজ্ঞাবান একজন নেতাকে। আর জাতি হারালো একজন জাতীয় নেতাকে। তিনি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।