তিন সিটিতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা

রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দিনভর নগরীর বিভিন্ন পাড়ায়-মহল্লায় চষে বেড়িয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আগামী সোমবার অনুষ্ঠিত হবে এই তিন সিটির নির্বাচন। সে হিসেবে আজ মধ্যরাতে শেষ হবে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা।

৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মন জয় করতে তিন সিটিতেই প্রতিটি ওয়ার্ডের অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় বড় বড় নেতারাও। তাদের ভিড়ে তিন সিটিতে উত্তুঙ্গ প্রচার, প্রচারণায় নতুন গতি, উজ্জীবিত মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে নগরীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা। শেষ মুহূর্তের প্রচারণার ব্যস্ততায় যেন নাওয়া-খাওয়াও ভুলে গেছেন প্রার্থী-নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকরা।

গতকাল শুক্রবার তিন সিটির নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, তিন সিটির সর্বত্রই নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। মাইকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে বিরতিহীন প্রচারণার শব্দে রাস্তায় কান পাতা দায়। পোস্টারে পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে তিন নগরীর রাজপথ ও অলিগলি। শেষ সময়ের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থী-সমর্থকরা।

সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন অলিতে গলিতে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও দলে দলে ভাগ হয়ে গণসংযোগ চালান। গণসংযোগে অসংখ্য নারী কর্মীর অংশগ্রহণও লক্ষণীয়।

তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক উত্তাপ বিরাজ করছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে নির্বাচন কমিশনও। যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে ভোটের বাক্স, ব্যালট পেপারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এসব নির্বাচনী এলাকায় আসতে শুরু করেছে। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ।

ইসি সূত্র জানায়, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়- নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা বা ভোটার নন এমন ব্যক্তিদের শুক্রবার মধ্যরাতের মধ্যে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করেছেন।

স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা-২০১০ সালের ৭৪ বিধি অনুসারে ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা, ভোটগ্রহণের দিন ও পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো সমাবেশ করা যাবে না। ভোটগ্রহণ সামনে রেখে সম্প্রতি স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এতে নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়- ভোটের দুই দিন আগে নির্বাচনী এলাকায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ৩০টি করে ওয়ার্ড রয়েছে। এ দুই সিটিতে পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারের ৩০টি করে মোবাইল ও ১০টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে। এছাড়া র‌্যাবের ৩০টি টিম ও ১৫ প্লাটুন করে বিজিবিও মাঠে থাকবে।

অপরদিকে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সিলেট সিটি কর্পোরেশনে পুলিশের ২৭টি মোবাইল ও ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ২৭টি টিম ও ১৪ প্লাটুন বিজিবি মাঠে থাকবে। এতে আরও বলা হয়- গড়ে পাঁচটি ভোট কেন্দ্রে ন্যূনতম একটি মোবাইল ফোর্স মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজনে মোবাইল ফোর্সের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

সিলেটে আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল রবিবার মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে অন্যান্য যানবাহন চলাচলে। একই সময় থেকে বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শনেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ভোট গ্রহণের পরদিন ৩১ জুলাই পর্যন্ত এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) গতকাল শুক্রবার এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এসব নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে।