দিনাজপুরের কান্তনগর মন্দির থেকে রাজবাড়ির পথে কান্তজীউ বিগ্রহ

আড়াইশ বছরের পুরানো ঐতিহ্য ও দিনাজপুরের রাজ পরিবারের প্রথা অনুযায়ী ঐতিহাসিক কান্তনগর মন্দির থেকে কান্তজীউ বিগ্রহ নৌপথে রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে।

বুধবার (১৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় দিনাজপুর পৌর শহরের রাজবাড়িতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় পূজা অর্চনা শেষে কান্তজীউ বিগ্রহকে পুনর্ভবা নদীর কান্তনগর ঘাটে আনা হয়। সেখানে দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল উপস্থিত থেকে কান্তজীউ বিগ্রহের নৌবহর যাত্রার বিদায় জানান। ভক্ত-পূণ্যার্থীদের ভিড়ে নদীর দুপাড়ে উৎসব দেখা দেয়। কান্তজীউ বিগ্রহেরর নৌবহরকে বিদায় জানানো পর সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস ধার্মিক মানুষের বৈশিষ্ট্য। অসাম্প্রদায়িক চেতনার কারণেই এদেশে সম্মিলিতভাবে প্রত্যেকটি সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষসহ অবস্থান করছে। যারা ধর্মকে ধারণ করে না, তারাই উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ধর্মান্ধতা একটি সমাজের ঐতিহ্য কে নষ্ট করে দেয়। তাই আমরা ধর্মীয় অনুভূতিকে ধারণ করবো আর সাম্প্রদায়িকতাকে বর্জন করবো।

তিনি আরও বলেন, কান্তনগর মন্দির থেকে কান্তজীউ বিগ্রহের বিদায় মুহূর্তে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। এতে শুধু হিন্দুরাই সমবেত ছিল না, সব ধর্মের মানুষদের সমন্বিত শ্রদ্ধা ভক্তি বিশ্বাসে কান্তজীউ বিগ্রহ তিন মাসের জন্য রাজবাড়ীতে যাচ্ছে।

দিনাজপুরের রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে। সেই বংশের রাজা প্রাণনাথ ১৭২২ সালে দিনাজপুর শহর থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলার কান্তনগর এলাকায় কান্তজীউ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭৫২ সালে এ মন্দিরের কাজ শেষ করেন তার পোষ্যপুত্র রামনাথ। সে সময় থেকেই কান্তজীউ বিগ্রহ নয় মাস কান্তনগর মন্দিরে এবং তিন মাস দিনাজপুর শহরের রাজবাড়িতে রাখা হয়। জন্মাষ্টমীর একদিন আগে কান্তজীউ বিগ্রহ ধর্মীয় উৎসব-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজবাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

কান্তনগর মন্দির থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার নদীপথে কান্তনগর ঘাট থেকে দিনাজপুর শহরের সাধুরঘাট পর্যন্ত শতাধিক ঘাটে কান্তজীউ বিগ্রহ বহনকারী নৌকা ভিড়ানো হয়। নৌকাযোগে দিনাজপুর আসার সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বী হাজার হাজার ভক্ত নদীর দুই কুলে কান্তজীউ বিগ্রহকে দর্শন এবং বাড়ির বিভিন্ন ফল, দুধ ও অন্য শাকসবজি নিয়ে কান্তজীউ বিগ্রহকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে আসে। এ সময় নদীর দুই কুলে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যদের ভিড়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উৎসবের আমেজে পরিণত হয়।