ইমামদের দক্ষতা উন্নয়নে দিনাজপুর ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির ভুমিকা

দক্ষতা উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হলো প্রশিক্ষণ। মসজিদের ইমামদের ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানদানের পাশাপাশি আর্থসামাজিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করেছে। ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।

১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি রয়েছে। ১৯৮৭-১৯৮৮ অর্থবছরে দিনাজপুর ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয়। দিনাজপুর ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মূল লক্ষ্য হলো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইমামদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা।

গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৩) দিনাজপুর ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি থেকে ১৪ হাজার ৪৪৪ জন ইমাম নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। নিয়মিত প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৪৫ দিন। ১৫ বছরে এ প্রশিক্ষণ একাডেমিতে ৪ হাজার ৪০৪ জনকে পাঁচ দিনব্যাপী রিফ্রেসার্স প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং ৬৯২ জন মাদ্রাসা-ছাত্র ও বেকার যুবককে দুই মাসব্যাপী আইসিটি-বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

এ ছাড়া দিনাজপুর ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে সারা দেশে এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৯ হাজার ১৬৮ জনকে ৪৫ দিনের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করার পাশাপাশি ৪২ হাজার ৩৬৫ জনকে রিফ্রেসার্স কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

দিনাজপুর ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে পরিচালিত ৪৫ দিনের নিয়মিত প্রশিক্ষণ কোর্সে অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের মধ্যে রয়েছেÑ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ধারণা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, কৃষি ও বনায়ন, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য চাষ, বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি, পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি প্রভৃতি। এই প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রত্যেক ইমামকে দৈনিক ৪৫০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ইমামদের বিনামূল্যে একাডেমির হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

দিনাজপুর ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ইমামগণ দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। অনেক ইমাম প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখছেন। ইমামগণ সমাজের প্রভাবশালী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দূরীকরণ, সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং আর্থসামাজিক বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার ক্ষেত্রে ইমামদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা। প্রশিক্ষিত ইমামগণ মসজিদে জুমার বয়ানসহ ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করে মানুষকে ইতিবাচক কাজে উদ্বুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছেন।