নওগাঁয় ফসলী জমি কেটে পুকুর খননের হিড়িক

নওগাঁর মহাদেবপুরে আইন ভেঙ্গে অবৈধ ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলী জমির মাটি কেটে পুকুর খননের হিড়িক পড়ে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে একের পর এক পুকুর খনন করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা না নেয়ায় এক শ্রেণীর মাটি ব্যবসায়ীরা দেদারছে পুকুর খননের মহোৎসবে মেতেছে। পুকুর খননের মাটি তারা সরাসরি ইটের ভাটায় সরবরাহ করছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সদর, হাতুড়, সফাপুর, চেরাগপুর প্রভৃতি ইউনিয়নে ভেকু মেশিন দিয়ে ধানী জমির মাটি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। কেউ কেউ পুরনো ছোট পুকুরের পারের চারদিকের ভিটা মাটি, গাছপালা কেটে পুকুর বড় করছেন। বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। এসব পুকুর খনন বেআইনী জেনেও সব পক্ষকে ম্যানেজ করেই প্রকাশ্য দিবালোকে পুকুরগুলো খনন করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ রাতের আঁধারে ভেকু মেশিন চালিয়ে খনন কাজ করছেন। কোন কোন সময় প্রশাসনের লোকেরা এসব বন্ধ করে দেন। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিনা বাধায় পুকুর খনন সম্পন্ন হয়। গতবছর এখানে ৫০টিরও বেশী পুকুর খনন করা হয়। এদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনই ব্যবস্থা নেয়নি।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের চকচকি দূর্গাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ফসলী জমির মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে অত্যন্ত গভীর করে কেটে অসংখ্য টাক্টরযোগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গ্রামবাসী অভিযোগ করেন যে, ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহণ করায় গ্রামীণ সড়কের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ওই জমির মালিক ওই গ্রামের মোশাররফ হোসেনের ছেলে সুলতান হোসেন জানালেন, মহাদেবপুরের খান ইটভাটার মালিক ৫০ হাজার টাকায় তাদের এই মাটি কিনে নিয়েছেন। তারই ভেকু মেশিন ব্যবহার করে এই পুকুরটি খনন করা হচ্ছে। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন অনুমতি নেননি বলেও জানান। বিষয়টি সকলেরই জানা থাকলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার বা প্রশাসনের কেউ এ পুকুর খননে তাদেরকে নিষেধ করেননি।
এই গ্রামের পাকা সড়কের পাশে প্রকাশ্যে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে আর একটি বিশাল পুকুর বানানো হচ্ছে। এটির মালিক এই গ্রামের শ্রী খোকন বাবুর ছেলে লাল্টু একজন সরকারী কর্মকর্তা। তিনি জানালেন, তার বিশাল ফসলের মাঠে ধান ভালো হয়না। তাই ধান ও মাছ উভয়ই চাষ করার জন্য চারিদিকে পার বেঁধে নিচ্ছেন। কিন্তু এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন অনুমতি নেননি।

এব্যাপারে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এর আগে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের চকগোবিন্দ এলাকায় ভেকু মেশিন দিয়ে পাকা সড়কের পাশে গভীর করে মাটি কাটার সময় বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে তাঁর নির্দেশে সদর ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে এটি বন্ধ করেছিলেন।

কিন্তু ইতিমধ্যেই গভীর করে কাটা পুকুর ভরাট করার বা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৮৮২ সালের ইজমেন্ট রাইট এ্যাক্ট আইনের ৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের যে স্থানে কৃষি জমি রহিয়াছে, তাহা এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা করিতে হইবে এবং কোনভাবেই তাহার ব্যবহার ভিত্তিক শ্রেণী পরিবর্তন করা যাইবেনা। কৃষি জমি এক ফসলী বা একাধিক ফসলী যাহাই হোক না কেন তাহা কৃষি জমি হিসাবেই ব্যবহার করিতে হইবে।’
এই আইনের ১২ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘উক্ত বিধান অমান্যে রয়েছে অনধিক পাঁচ বছর কারাদন্ড, বা ন্যুনতম এক বছর কারাদন্ড, বা অর্থদন্ড, বা উভয় প্রকারের দন্ড। তবে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ভূমি কর্মকর্তা বরাবর আবেদনের মাধ্যমে ওই ভূমির ব্যবহারগত শ্রেণী পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।’আইনে স্পষ্টভাবে ফসলী জমিতে পুকুর খননের শাস্তির বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে একেবারেই নীরব।