নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনা নদী থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির সজারু উদ্ধার

নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনা নদী থেকে প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির একটি সজারু উদ্ধারের পর স্থানীয় সামাজিক বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

বুধবার (৭ জুন) বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ঢাকা এর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা এর নির্দেশে রায়পুরার পান্থশালা সংলগ্ন সামাজিক বনে সজারটি অবমুক্ত করা হয়।

এর আগে বুধবার ভোরে রায়পুরা উপজেলার মাঝেরচর গ্রামের রাশেদ মিয়া (৩০) নামের এক জেলে মাছ ধরার সময় পান্থশালা সীমানা ঘেঁষা মেঘনা নদী থেকে সজারটি উদ্ধার করেন।

স্থানীয় জেলে রাশেদ মিয়া বলেন, তিনি প্রতিদিন মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় মাছ ধরেন। ভোরে পান্থশালা এলাকায় মাছ ধরতে ধরতে যান তিনি। মাছ ধরার পর ভোর ৫ টায় ফেরার সময় পানিতে কিছু একটা নড়াচড়া করতে দেখেন। তিনিসহ বেশ কয়েকজন এটিকে বড় ধরনের ইদুর বলে ধারণা করেন। এসময় কেউ কেউ এটি মেরে ফেলতে চেয়েছিলন। জেলে রাশেদ মিয়া এটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির সজারু চিনতে পেরে মারতে বাধা দিয়ে নিজেই ধরে সুতা দিয়ে বেধে রাখেন। ধরার সময় সজারুর গায়ের তিন—চারটি কাঁটা তার হাতে বিধলেও তিনি সজারুটি ছাড়েননি।

কী মনে করে ধরেছেন এবং নৌকায় তুলেছেন জানতে চাইলে রাশেদ মিয়া জানান, আমি চিনেছি এটা সজারু। বাকিরা চিনেনি তাই মেরে ফেলতে চেয়েছিলন। পানি থেকে তুলে নৌকায় উঠিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছি। এটার ওজন প্রায় ৫ কেজির মত হবে।

এই প্রতিবেদক উদ্ধার হওয়া সজারটির ছবি পাঠান বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ঢাকা এর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানার কাছে। তিনি এই প্রজাতিটিকে দেশিয় সজার (Indian Crested Porcupine) বলে চিহ্নিত করেন। তার ধারণা, খাবারের খোঁজে প্রাণীটি লোকালয়ে এসেছিল। এটা পানিতে যাওয়ার কথা না। হয়তবা কোনভাবে চলে গেছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ঢাকা এর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা বলেন, সজারু একটি নিরীহ তৃণভোজী প্রাণী। এটি কারও কোন ক্ষতি করে না। প্রকৃতিতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তিনি জানান, খবর পেয়ে আমরা সজারুটি বনে অবমুক্ত করতে ওই জেলে ও সচেতন নাগরিক হিসেবে স্থানীয় মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ নুরল হুদা চিশতির সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা চাইলে এটি উদ্ধার করে ঢাকাতে চিড়িয়াখানা কিংবা দূরে কোথাও বনে অবমুক্ত করতে পারতাম। এতে সজারটির প্রতি অমানবিক আচরণ হবে। নিশ্চয়ই যে—ই এলাকা থেকে ও—ই জেলে সজারটি ধরেছেন ওখানে তাঁর পরিবার আছে। আমরা ঢাকা নিয়ে আসলে ও—ই সজারুটির পরিবার বঞ্চিত হবে, পরিবার পাবে না। তা—ই আমরা চেয়েছি যেখান থেকে সজারটি ধরা হয়েছে, তার আশেপাশে শুকনো নিরিবিলি জায়গায় ছেড়ে দিলে সে তার পরিবার খুঁজে নেবে। ওই জেলে ও ইমাম উদ্ধারকৃত এলাকায় সজারটি ছেড়ে দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। সজারুটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির।

বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা আরও জানান, সজারু বৃহৎ ইঁদুরজাতীয় নিশাচর প্রাণী। এরা মাটিতে গর্ত খুঁডে বাসস্থান বানায়। তৃণভোজী জীব হিসেবে প্রাণীটি ঘাস, লতা—পাতা, ফলমূল, শস্যদানা ইত্যাদি খেযে জীবনধারণ করে। এরা সাধারণত আড়াই বছরে পূর্ণ বয়স্ক হয় এবং বছরে এক থেকে চারটি বাচ্চা দেয়। পূর্ণ বয়স্ক একটি সজারু ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন হয় এবং ১৮ থেকে ২০ বছর বাঁচে। যে কোনো প্রাণীই রেগে গেলে সামনের দিক দিয়ে আক্রমণ করে। সজার ব্যতিক্রম প্রাণী যে কিনা পেছন দিক দিয়ে আক্রমণ করে। সাধারণত তীক্ষ্ণ ও বিষাক্ত কাটা ফুটিয়ে দিয়ে শিকারিকে নিবৃত্ত করে সজারু।

তিনি বলেন, এক সময় দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই সজারুর দেখা মিলত। বর্তমানে সুন্দরবনসহ বেশকিছু সংরক্ষিত বনে সজারু টিকে আছে বলে তথ্য পাওয়া গেলেও গত কয়েকবছরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সজারুর দেখা মিলছে, যেটি প্রাণীটির টিকে থাকার ব্যাপারে দারণ আশাব্যাঞ্জক খবর। তবে দেশে সজারখুবই বিপন্ন। ব্যাপক নিধন ও বাসস্থান ধ্বংসই এদের বিপন্ন হওযার প্রধান কারণ।

বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল—১ অনুযাযী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা দনীয় অপরাধ বলেও জানান বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা।