নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশি নিহতের সংখ্যা ৮ হতে পারে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি- বাংলাদেশি নিহতের সংখ্যা চার থেকে বেড়ে আট হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি আমাদের মিশন এখনো নিশ্চিত করেনি।

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট আয়োজিত এক সেমিনারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক এ সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দোপাধ্যায়, ডিক্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুল ইসলাম হাসিব প্রমুখ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এ.কে.এম আতিকুর রহমান।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার ঘটনায় বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সুখবর হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সদস্যরা ভালোমত দেশে ফিরে এসেছেন। আর খারাপ খবর হচ্ছে মৃত্যের সংখ্যা বাড়তে পারে।

নিহতের সংখ্যা বেড়ে কত দাঁড়িয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন মধ্যামে জানতে পারছি এটা বেড়ে ৮ হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনো আমাদের মিশন নিশ্চিত করতে পারেনি।

এর আগে চারজনের মৃত্যুর কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের একজন করে সদস্যকে নিউজিল্যান্ডে নেয়ার ব্যবস্থা করবে দেশটির সরকার। তারা চাইলে মরদেহ দেশে নিয়ে আসতে পারবেন। বাংলাদেশি নিহত চারজনের মধ্যে দুজনের ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা হলেন- স্থানীয় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ এবং গৃহিণী হোসনে আরা ফরিদ।

অপর দুজন নিহতের তথ্য স্থানীয় কমিউনিটির মাধ্যমে জেনেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা হলেন- নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ উমর ফারুক ও চাঁদপুরের মোজাম্মেল হক।

এদিকে লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদকে নিউজিল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটি কবরস্থানেই সমাহিত করা হবে বলে জানান ড. সামাদের বড় ছেলে তোহা মোহাম্মদ।

মিশনের কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের সমন্বয়ের অভাব নেই। তবে শতভাগ নিশ্চিত না হলে মিশন তথ্য দিতে পারেনা। তাই দেরি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের মিশন ইতিমধ্যে সেখানে কাজ শুরু করেছে। কোনো নিহতের পরিবার যদি তাদের মৃত্যুদেহ দেশে আনতে চায় তাহলে তাদের খরচ সরকার বহন করবে। এজন্য সরকার কাজ শুরু করে দিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা বিদেশের মাটিতে খেলতে গেলে সে দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি আগে থেকেই রেকি করা হবে। অর্থাৎ অগ্রগামী দল পাঠিয়ে নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই ক্রিকেটারদের পাঠানো হবে।

বিমানবন্দরে হয়রানি প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি প্রবাসীরা দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে তাদেরকে বেশ হয়রানির শিকার হতে হয়। এজন্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ঢাকাসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে সিসিটিভি স্থাপন করেছি। এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মনিটর করা হচ্ছে। যাতে করে বিমানবন্দরে প্রবাসীদের কেউ হয়রানি না কতে পারে সেজন্য জোরালোভাবে এসব মনিটর করা হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের ৭৮টি মিশনে অভিযোগ দেয়ার জন্য কলসেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।

তবে দু’একটি মিশনে এখনো কল সেন্টার স্থাপন সম্ভব হয়নি। খুব শিগগির সেগুলোতের কল সেন্টার স্থাপন করা হবে। কোনো প্রবাসী যে কোনো দেশে গিয়ে সমস্যায় পড়লে এসব কলসেন্টাররে জানালেই তাদের সহযোগিতা করা হবে। এসব কলসেন্টার ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন দুরদর্শী একনেতা। তার কারো সাথে বৈরিতা নয় সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এই নীতির কারণে আজো আমরা পরারাষ্ট্রনীতিতে সুফল পাচ্ছি। আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশ, উন্নয়নের রোল মডেল এই বাংলাদেশের শিকড় তৈরি হয়েছে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর বঙ্গবন্ধুর বিদেশনীতির ফলে। তিনি বলেছেন ‘আমি ভারতপন্থী নই, আমেরিকাপন্থী কিংবা চীনপন্থী নই; আমি আমার জনগনপন্থী’ এই চেতনা ধারণ করে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুর্নগঠনের জন্যে যিনি ছুটেছেন প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য। আদায় করেছেন স্বাধীন বাংলার স্বীকৃতি।

ড. আবদুল মোমেন আরও বলেন, আমি জাতিসংঘে থাকার সময় ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওই জন্য বাংলাদেশেই এ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাই এটি সম্ভব হয়নি। তবে গতবছর আমাদের সংসদে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে। আমরা আবারও জাতিসংঘ থেকে স্বীকৃতির জন্য এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদে বন্দুকধারীদের গুলিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।

আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৪৮জন। নিহতদের মধ্যে চার বাংলাদেশিও রয়েছেন।

নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৭ বাংলাদেশি। ওই মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পথচারীর খবরে ভাগ্যক্রমে হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। নামাজরত অবস্থায় মুসল্লিদের ওপর শেতাঙ্গ বন্দুকধারীর চালানো স্মরণকালের ইতিহাসে বর্বরোচিত এ হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে।