নির্বাচন নিয়ে সংকটের সমাধান এক ঘণ্টাতেই সম্ভব

অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সাবেক রাষ্ট্রপতি, বর্তমানে বিকল্পধারার চেয়ারম্যান। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন। রাজনীতিক পরিচয় ছাপিয়ে তিনি উপমহাদেশের গুণী চিকিৎসক।

সম্প্রতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী নামে পরিচিত) আলোচনায় এসেছেন যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাদের সঙ্গে জোট করেছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে ‘বুড়োদের’ এই জোট নিয়ে রাজনীতিতে সরব আলোচনা চলছে। সেসবের জবাব ছাড়াও পরিবর্তন ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে শনিবার দুপুরে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী খোলামেলা কথা বলেছেন রাজনীতি, নির্বাচন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে।

১০ দিন পরেই ৮৯ বছরে পা দিবেন বি. চৌধুরী। ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের প্রখ্যাত মুন্সেফ বাড়িতে (নানা বাড়ি) জন্মগ্রহণ করেন। এই বয়সেও সমানে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

কীভাবে সম্ভব হচ্ছে— জানতে চাইলে সহাস্য জবাব, এই বয়সে যতটুকু ভালো থাকা যায়, ততটুকুই আছি। কী আর করা। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেমেছি, ছুটতেই হবে। বয়সের কাছে আটকে থাকলে চলবে না। এই লড়াইয়ে না জিতলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

একাদশ নির্বাচন নিয়ে নিজের অবস্থান পষ্ট করেন বি. চৌধুরী, ‘সংসদ ভেঙে নির্বাচন দিতে হবে— আমরা (যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া) স্পষ্টভাবে এই ঘোষণা দিয়েছি। বর্তমান যে কাঠামোতে নির্বাচনকালীন সরকার হতে যাচ্ছে, তাতে আমাদের ঘোর আপত্তি রয়েছে। কারণ, নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে নিরপেক্ষ। দলীয় লোক দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানের দোহাই দেয়া হচ্ছে। কিন্তু, কেউ কি বলবেন, এই সংসদের কতজন জনগণের ভোটে নির্বাচিত? তাদের বেশিরভাগই বিনাভোটে সরকারি দলের এমপি হয়েছেন। এই সংসদে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। অনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দেশে সংকট তৈরি করেছেন। এখন এই সংকট সমাধানে তাদেরকেই সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধানে নিরপেক্ষ সরকার পুনর্বহাল করতে তো অধিবেশন ডাকার পর মাত্র এক ঘণ্টা সময় লাগবে। এক ঘণ্টাতেই যেখানে সংকটের সমাধান সম্ভব, সেখানে এত কথা কেন বলা হচ্ছে, আমার বুঝে আসে না।’

বি. চৌধুরীর সাফ জবাব, আমরা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। ভোট ছাড়া নির্বাচনে যাব না। যেভাবে ক’দিন আগে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও গাজীপুর সিটিতে নির্বাচন হলো? নির্বাচনের আগের রাত থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হলো। এমনকি নির্বাচনে যারা এজেন্ট তাদের গ্রেফতার করা হলো। এই রকম কারসাজির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন জনগণ দেখতে চায় না। এই ধরনের নির্বাচন আমাদের রুখতেই হবে।

নির্বাচন রুখতেই কী তাহলে জাতীয় ঐক্য করেছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে দিতে জাতীয় ঐক্য করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন যেন না হয়, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে আমরা ঐক্য করেছি। আমাদের কর্মসূচি আছে, সেটা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।’

জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন চাই। বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে। নির্বাচনের আগে সব রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এই দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

রোববাব সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপির জনসভা। সেখানে যুক্তফ্রন্ট কিংবা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কেউ থাকছেন কিনা— এমন প্রশ্নে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এটি বিএনপির কর্মসূচি। তারা তাদের কর্মসূচি পালন করবে। আমরা আমাদেরটা। বিএনপির সমাবেশতো ঐক্যের সমাবেশ নয়। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো কিংবা আমাদের প্রতিনিধির যাওয়া না যাওয়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ অর্থবহন করে না।’