পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শত বছরেও পাকা সড়ক নির্মাণ হয়নি যে ইউনিয়নে

দেশ স্বাধীনের পরেও পেরিয়ে গেছে যুগের পর যুগ। গ্রামীণ জনপদে বেড়ে ওঠা মানুষগুলোও জীবদ্দশায় কাঁদা মাটি মাড়িয়ে চলতে চলতে বার্ধক্য কাটিয়ে অনেকেই পৃথীবী ছেড়েছেন।

আবার অনেকে বেঁচে আছেন কালের সাক্ষী হয়ে। আর প্রবীন নাগরিকরা বলছেন, নিজ দেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তরিত হলেও ভাগ্য বদল হয়নি তাদের। আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ঐতিহ্যবাহী একটি ইউনিয়নে। ফলে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়ন পরিষদ ঘোষনা করা হয় প্রায় শত বছর আগে।

তবে এই ইউপিতে পাকিস্তান সরকারের আমলে আয়ূব খাঁনের নেতৃত্বাধীন মাটির নির্মিত গ্রামীন সড়কগুলোতে আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ফলে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থায়ী-অস্থায়ী ভাবে বসবাসরত প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। তাই ঐতিহ্যবাহী এ ইউনিয়নটিতে সংযোগ সড়কসহ মূল সড়কগুলোতে পাকাকরণ না হওয়ায় অতিরিক্ত মূল্য গুনতে হচ্ছে কৃষি পণ্য বিক্রি,ব্যবহারিক প্রয়োজনীয় মালামাল বহনসহ যাত্রা পথেও। আর সবচেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের।

আর বর্ষা মৌসুমে কাঁদামাটির সড়ক দিয়ে পাঠশালায় পৌঁছাতে পারে না অধিকাংশ প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই ইউনিয়নে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি দাখিল মাদরাসা, ৮টি হাফিজিয়া মাদরাসা ও ১৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পাকা সড়কের অভাবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে ছাত্র-ছাত্রীদের চরম ভাবে বেগ পেতে হয়। এক সময়ে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

নেওয়াপাড়া দাখিল মাদরাসার দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী নাদীয়া জানান, প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেটে তাকে পাঠশালায় পৌঁছাতে হয়। আর বর্ষা মৌসুমে পা পিছলে পড়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকবার। এছাড়া ওই সময়ে কোন যানবাহন চলাচল না করায় প্রায় দিনই বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফিরতে হয়। আর শুকনা মৌসুমে একমাত্র মোটরসাইকেল ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। চাকামইয়া নুর-মোহাম্মাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোয়াজ্ঝেম হোসেন জানান, বিদ্যালয় পৌঁছাতে শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট কষ্ট করতে হয়। আর বর্ষা মৌসুমে ট্রলার ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই।

ওই সময়ে শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে পাঠদানে অংশগ্রহন করতে পারে না। এমনকি শিক্ষগনও মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। নিশানবাড়িয়া এলাকার আমির হোসেন, যিনি বড় খামারি হিসেবে বেশ পরিচিত। তার অভিযোগ, নিজ খামারে উৎপাদিত সবজি সরবরাহ করতে কয়েকগুন ভাড়া বেশি গুনতে হয় তাকে। এমনকি সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারায় তার কৃষিপণ্যের দামও কম পান তিনি। স্থানীয় বাসীন্দা ৮০ বছর বয়সী আয়ূব আলী জানান, পাকিস্তার সরকারের আমলে বেরিবাঁধ নির্মাণের সময় মাটি কাটার সর্দার ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বেই চাকামইয়াসহ একধিক এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ হয়েছে। তবে অন্যসব এলাকায় সড়ক উন্নয়ন হলেও তার জন্মভ‚মির সড়ক উন্নয়ন হয়নি বলে আজও পায়ে হেটে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। চাকামইয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবর ফকির জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৬০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ৮ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরন হয়েছে দীর্ঘ বছর আগে।

এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো উন্নয়ন হয়নি। ফলে শুধু কলাপাড়া নয় দক্ষিনাঞ্চলের মধ্যে চাকামইয়া ইউনিয়ন অনুন্নত রয়েছে। তিনি ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, ওই ইউপির সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এবিষয়ে তিনি দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।