পাবনায় খেত থেকে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ, পাহারায় কৃষক

পেঁয়াজের ভাণ্ডারখ্যাত পাবনার বেড়া-সাঁথিয়া উপজেলায় এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারী ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে এমন দাম অনেকটাই অস্বাভাবিক। আর এই অস্বাভাবিক দামের কারণে প্রতি রাতেই খেত থেকে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ। চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন পেঁয়াজ চাষীরা। কোনো কোনো পেঁয়াজ চাষী আবার চোরের ভয়ে পুষ্ট হওয়ার আগেই খেত থেকে পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেড়া উপজেলায় ১ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৮৪০ হেক্টর। সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।

এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। বাকি সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি জোরদহ গ্রামের ইসাক হাজির ও খাকছাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর খেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। এ ছাড়া এক সপ্তাহে সাঁথিয়ার পুণ্ডুরিয়া গ্রামের হাবুল মানিক মন্টু, ইমদাদুল হকসহ প্রায় ১০ জন কৃষকের পেঁয়াজখেত থেকে তিন-চার মণ পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে।

দেখা গেছে, চাকলা গ্রামের কৃষকরা পেঁয়াজখেতে পাশে কুঁড়েঘরে তুলেছেন। প্রতিটি কুঁড়েঘরে তিন-চারজন করে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।

কৃষকরা জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজখেতের সব পেঁয়াজই বেশ বড় হয়েছে। এ পেঁয়াজ তুলতে সময় লাগে না। একজন ৩০ মিনিটে দেড় মণ পেঁয়াজ তুলতে পারেন। তাই সুযোগ বুঝে দুই-তিনজন চোর এসে ১০-১৫ মিনিটে দুই-তিন মণ পেঁয়াজ তুলে নিয়ে যেতে পারে।

বেড়া চাকলা গ্রামের কৃষক সাইফুল মোল্লা বলেন, ‘আমি চার বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগাইছি। দুই বিঘা বিক্রি করেছি। অনেক গ্রামেই পেঁয়াজ চুরি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। চুরি হওয়ার ভয়ে আমরা সবাই মিলে রাতে পেঁয়াজ পাহারা দিচ্ছি। দাম বেশি তাই কাঁচা পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছি। অথচ ওই পেঁয়াজ পুরোপুরি পুষ্ট (পরিপক্ব) হতে আরও অন্তত ১০ দিন সময় লাগত।’

সাঁথিয়ার পুণ্ডুরিযা গ্রামের আরেক পেঁয়াজচাষী খালেক বেপারী বলেন, ‘এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হইছে। তা ছাড়া দামও খুব ভালো পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভালো দামের কারণে পেঁয়াজের খেতে চোরের উৎপাত খুব বাড়ছে। সাঁথিয়ার অনেক গ্রামের কৃষকরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আগে বিক্রি করেছেন।

এখন আমাদের এলাকায় পেঁয়াজ উঠতে শুরু হয়েছে। এদিকে চোরের ভয়, অন্যদিকে দামও ভালো যাচ্ছে। তাই জমির পেঁয়াজ পরিপক্ব হওয়ার আগেই তুলে নিচ্ছি।’

চাকলা-পুণ্ডুরিয়া গ্রাম ছাড়াও উপজেলার আফড়া, বায়া, শহীদনগরসহ বেশ কিছু গ্রামে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও চোরের ভয়ে পেঁয়াজের খেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে কৃষকেরা এবার ভালো দাম পাচ্ছেন। আর ভালো দামের কারণেই কোনো কোনো জায়গায় খেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে। এ বিষয়ে আসলে তাঁদের তেমন কিছু করার নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানায় জানানো হবে। থানা-পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের প্রচেষ্টায় এ ক্ষেত্রে ফল পাওয়া যেতে পারে।