পিঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞায় বিক্ষোভ ভারতেও

পিঁয়াজ রফতানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবার পথে নামল পিঁয়াজ চাষিরা। সোমবারই ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)’এর তরফে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে ‘আজ থেকে সমস্ত ধরনের (টাটকা ও হিমায়িত) পিয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পিয়াজের রফতানির ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে।’

কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তের পর মঙ্গলবারই মহারাষ্ট্রের নাসিক, লাসালগাঁও, আহমেদনগর, জলগাঁও সহ একাধিক জায়গায় প্রতিবাদ জানায় চাষিরা।

খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট পিয়াজ উৎপাদনের ৪৫ শতাংশ আসে এই অঞ্চল থেকে।

নাসিক, লাসালগাঁও, ইয়োলা, কালওয়ান, সাতানা, ভুসাওয়াল সহ মহারাষ্ট্রের একাধিক বাজারে প্রতিদিন কয়েক শত কুইন্ট্যাল পিয়াজের ব্যবসা হয়। এই সমস্ত জায়গায় প্রতিটি মার্কেটই বন্ধ রাখা হয়। কোথাও আবার রাস্তা অবরোধ করে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়।

চাষিদের দাবি পিয়াজের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

পুলিশ সূত্রে খবর মুম্বাই-আগ্রা, নাসিক-ঔরঙ্গাবাদ এবং সিন্নার-আহমেদনগর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারী পিয়াজ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এতে যান চলাচলের ওপর ব্যাপক প্রভাব পরে।

কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে নাসিকের চাঁদওয়ার এলাকার পিয়াজ চাষি জয়ন্ত দুধানে জানান ‘এটা বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। মোদি সরকার আমাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।’

তিনি আরও জানান, ‘করোনা ও লকডাউনের কারণে এমনিতে গত মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত পুরো সময়টাই পিয়াজ চাষিরা প্রচণ্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
এখন যখন চাষিরা তাদের পিয়াজ বাজারে নিয়ে আসছেন, এই সরকার তা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিল।’

অল ইন্ডিয়া কিষান সভার সাধারণ সম্পাদক ড. অজিত নাওয়ালে জানান, ‘দুই মাস আগেই কেন্দ্রের মোদি সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে পিয়াজকে বাদ দিয়েছে। তাহলে পিয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার যৌক্তিকতা কোথায়। বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে পিয়াজ রফতানি করে চাষিরা ভাল মুনাফা লাভ করছেন, কিন্তু কেন্দ্রের এই আচমকা সিদ্ধান্তের ফলে পিয়াজের বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) নেতা শারদ পাওয়ারও।
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুষ গয়াল’এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি জানিয়েছি যে আন্তর্জাতিক ভাবে পিয়াজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং আমাদের তা রফতানি চালিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের একটা আচমকা সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পিয়াজ রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। এই অবস্থায় পাকিস্তানসহ অন্য দেশগুলি তার সুযোগ নেবে।’

এ ব্যাপারে মহারাষ্ট্রের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী ছগন ভুজবল জানান, ‘এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। লকডাউনের কারণে চাষিদের ইতোমধ্যেই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সেটা কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারে না। তাছাড়া চাষিরা যদি এভাবে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চালিয়ে যায় সেক্ষেত্রে দেশীয় বাজারে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।’