পিরোজপুরের সরকারি হাতেম আলী বালিকা বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার বেহালদশা

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে সরকারি হাতেম আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখা।

সরকার ব্যবহারিক শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিলেও নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস হয় না ভোকেশনাল সংযুক্ত এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে। এতে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রাকটিক্যাল উপকরণ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল চলাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত। এমনকি তার কক্ষটিও তালাবদ্ধ। তালাবদ্ধ রয়েছে কারিগরি শাখার ল্যাব কক্ষটিও।

নীতিমালা অনুযায়ী এসএসসি ভোকেশনাল কোর্স পরিচালনার জন্য কম্পিউটার ট্রেড অনুমোদন না থাকলেও ২০টি সচল কম্পিউটারসহ অবশ্যই একটি স্বতন্ত্র কম্পিউটার ল্যাব থাকতে হবে। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে কোন স্বতন্ত্র কম্পিউটার ল্যাব নেই।

কারিগরি শাখায় ব্যবহারিক ক্লাসের গুরুত্ব না থাকায় প্রতিটি ট্রেডেই তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থী সংকট। ভোকেশনাল নবম শ্রেনীর একটি জেনারেল ক্লাসে দেখা যায়, ইলেকট্রিকালে ৩ জন, টেইলরিংয়ে ৪ জন এবং ফুড ট্রেডে ৭ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ইলেকট্রিক্যাল ট্রেড থেকে অংশগ্রহণ করেছে মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থী। যেখানে প্রতি ট্রেডে কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। একটি ট্রেডে মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থী থাকার বিষয়ে কারিগরি শাখার একজন শিক্ষক জানান, বালিকা বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখায় ছাত্রীদের পাশাপাশি ছাত্রদের ভর্তির সুযোগ থাকলে এ সংকট থাকতো না।

কারিগরি শাখার ল্যাবের তালা খুলে দেখা যায়, ইলেকট্রিক্যাল এবং ফুড ট্রেডের ব্যবহারিক উপকরণ অচল অবস্থায় পড়ে আছে। টেইলরিং মেশিন দিয়ে কোন কিছু তৈরির জ্ঞান না থাকায় দু’একটি মেশিন খেলনা হিসেবে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা। তবে অধিকাংশ মেশিনই অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব। উপড়ে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষটি তালাবদ্ধ। তালা খোলার পর ১০টি ল্যাপটপের ৫টিই অচল অবস্থায় পাওয়া যায়। যদিও ১৭টি ল্যাপটপ থাকার কথা। ডিজিটাল ল্যাবটির একদিকে যেমন কোন কার্যকারিতা নেই অন্যদিকে তেমনি নেই কোন রক্ষণাবেক্ষণ।

সরকার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে ২৩টি আইসিটি সরঞ্জাম সরবরাহ করলেও এখানে অধিকাংশই দৃশ্যমান নেই। নেই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। নেই কোন জবাবদিহিতা। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে ল্যাবের আংশিক সরঞ্জাম।

শুধু কারিগরি শাখা নয়। বেহাল দশায় রয়েছে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবহারিক ক্লাসও। বিজ্ঞান শিক্ষায় ব্যবহারিক ক্লাসের গুরুত্ব থাকলেও বিজ্ঞান ভবনটিকে বানানো হয়েছে প্রধান শিক্ষকের বাসভবন। শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ ব্যবহারিক ক্লাস।

কারিগরি শাখার ৭ জন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ভাতা এবং ল্যাব খরচের নামে সরকারের লাখ লাখ টাকা খরচ হলেও বাস্তবে নেই শিক্ষার্থীকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে ব্যবহারিক ক্লাস।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষককে ফোন দিলে তিনি ইউএনও অফিসে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপর আর তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব আলম জানান,বিষয়টি স্যারকে অবগত করা হবে।নিউজ লিঙ্ক অফিস মেইলে পাঠিয়ে দিলে বিদ্যালয়টির কারিগরি শাখার অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা তদন্ত সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।