ফুলেল শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতির সূর্যসন্তানদের স্মরণ

হাজার হাজার মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন জাতির সূর্যসন্তানরা। ভোরের আলো ফুটতেই বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ গুলোতে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। জাতিকে মেধাশূন্য করতেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মীসহ মেধাবীদের হত্যা করে। সব বাধা পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ছিল আগত সবার মাঝে।

আজ সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের কণ্ঠে ছিল উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। ছিল ইতিহাস বিকৃতকারীদের রুখে দেয়ার শপথ। সাম্প্রদায়িক শক্তির ধারক-বাহকদের প্রত্যাখ্যান এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতে সঠিক ইতিহাসের চর্চার দাবীও ছিল মানুষের মাঝে।

রায়েরবাজার বধ্যভূমি উম্মুক্ত করে দেওয়া হলে শীতের কুয়াশা উপেক্ষা করেই জনগণের ঢল নামে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। সকাল থেকে দুপুর অবদি একটানা চলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শহীদবেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এসময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সামরিক কায়দায় সালাম জানায়।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

পরে মন্ত্রিসভার প্রতিনিধিরা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করেন।

এরপর সর্বস্তরের জনগণ মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। পতাকা আর ফুল হাতে সকাল থেকেই নানা বয়সের মানুষ জড়ো হন শহীদ বেদীতে। তবে করোনা মহামারির কারণে অন্য সময়ের তুলনায় এবার মানুষ কম।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনে মাঠে নামে। রাতের অন্ধকারে বাসা কিংবা কর্মস্থল থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে তারা শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করা। দেশের নানা জায়গায় হত্যাযজ্ঞ চললেও মূল হত্যাযজ্ঞ চলে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে।