বাংলাদেশ উদ্বাস্তুদের স্থায়ী আবাসন হতে পারে না : আ স ম রব

রোহিঙ্গা সংকটের চতুর্থ বর্ষ অতিক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি, স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানে ৫ (পাচঁ) দফা প্রস্তাবনা সম্বলিত নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেন।

“আজ জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চার বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন করার পর আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি। মিয়ানমারের বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, প্রত্যাবর্তনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগসহ বিভিন্ন জটিলতায় দ্রুত প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হবে এমন সম্ভাবনাও দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে। সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকায় মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় এবং চীনকে সাথে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনাও স্থবির হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের চেয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

এ বিষয়ে মিয়ানমারের সাথে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনীতিতে রোহিঙ্গা সংকটের প্রশ্নটি আড়ালে চলে গেছে। বিশ্ব মনোযোগ এখন আফগানিস্তানের দিকে।

এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদের চতুর্থ বর্ষ অতিক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ উদ্বাস্তুদের স্থায়ী আবাসন হতে পারেনা। এটি একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ইস্যু।
এ সংকট দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং স্থিতিশীলতা চরম ঝুঁকিতে পড়বে। রোহিঙ্গা ইস্যু এই অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমাগত জটিল আকার ধারণ করার প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে করণীয়:

(১) রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করবে-এবিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

(২) বাংলাদেশের দুই বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র চীন এবং ভারত সহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সম্পৃক্ত করার কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

(৩) রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় আপিল আদালতের বিচার, তদন্ত ও শুনানির প্রশ্নে জবাবদিহির ক্ষেত্রে মিয়ানমারের উপর বহুমাত্রিক চাপ বৃদ্ধির তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।

(৪) রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে হত্যা-গুম সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

(৫) রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আসিয়ানকে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণে জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।

মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কাঙ্খিত কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। সুতরাং জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে, ক্ষুদ্র স্বার্থ উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারকেই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”