বান্দরবানের লামায় ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে এবং রেংয়েন কার্বারী পাড়াবাসীদের কলাবাগান ধ্বংস ও স্কুল নির্মাণে পুলিশের বাধাদানের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।

সোমবার(২৬শে সেপ্টেম্বর) ইউপিডিএফের স্থানীয় ইউনিট সমূহের উদ্যোগে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের মাচলং ও বাঘাইহাট এবং বঙ্গলতলী এলাকায়, কুদুকছড়ি, কাউখালী এবং খাগড়াছড়ির পানছড়িতে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ অংশগ্রহণকারীরা “অবিলম্বে ভূমি কমিশন কার্যকর কর, অবিলম্বে ভূমি বেদখল বন্ধ কর, রাবার বাগানের নামে ভূমি বেদখল বন্ধ কর, পর্যটনের নামে ভূমি বেদখল বন্ধ কর, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের নিজ জমিতে পুনর্বাসন কর, উন্নয়নের নামে পাহাড়ে ভূমি বেদখল বন্ধ কর” ইত্যাদি দাবির শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

এসব সমাবেশে বক্তারা বলেন, বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের রাবার কোম্পানি সেখানকার বসবাসকারী ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০একর ভোগদখলীয় জুমভূমি বেদখলের জন্য নানা ষড়ন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারই অংশ হিসেবে গত ২৪শে সেপ্টেম্বর রেংয়ের ম্রো পাড়াবাসীর সৃজিত কলাবাগান কেটে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। একই দিন লামা থানা পুলিশের এসআই শামীমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে লাংকম ম্রো পাড়ায় নির্মাণাধীন স্কুলের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তার আগে গত ৬ই সেপ্টেম্বর রাবার কোম্পানির দুর্বৃত্তরা কলাইয়া ঝিরি নামে ম্রোদের পানির উৎসে বিষ ঢেলে দিয়ে তাদের হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, ম্রো-ত্রিপুরাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে হামলা-মামলাসহ নানা হয়রানি করে যাচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার কথিত উন্নয়নের নামে পাহাড়িদের ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। লামা থেকে সাজেক পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ভূমি জবরদখল চলছে। কখনো পর্যটন, কখনো সড়ক নির্মাণ, কখনো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন, কখনো বিভিন্ন কোম্পানির নামে, কখনো সেটলার বাঙালিদের দিয়ে এই ভূমি আগ্রাসন চলছে। এই ভূমি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জনগণের প্রতি আহবান জানান বক্তারা।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০একর ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, কলাবাগান ধ্বংসকারীদের আইনের আওতায় আনা, স্কুল নির্মাণের বাধা তুলে নেওয়া এবং ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র সকল লিজ বাতিল করে কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানান।

একই সাথে এসব বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ভূমি বেদখল বন্ধ করা, এই যাবত বেদখলকৃত সকল ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুুুদের নিজ নিজ জমিতে যথাযথ পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে পুর্নবাসনের দাবি জানান।

সাজেক ও বঙ্গলতলী: সকাল ১০টায় মাচলং এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে কিরণ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র সাজেক ইউনিটের সংগঠক সুমন চাকমা।

অপরদিকে দুপুর ১২টায় বাঘাইহাট এলাকায় মিছিল পরববর্তী অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে ইংগেছ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সভাপতি কালো বরন চাকমা।
এছাড়া বিকাল ৪টার দিকে বঙ্গলতলী ইউনিয়ন এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিমল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক রিয়েল চাকমা, গণতাতিন্ত্রক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি রতুজোতি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নিউটন চাকমা।

কুদুকছড়ি: একই দাবিতে রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশে করে ইউপিডিএফ’র স্থানীয় ইউনিট । সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ইউপিডিএফ সদস্য নীতি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক জয়েন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক ধর্মশিং চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি নিকন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙাামটি জেলা শাখার সভাপতি রিমি চাকমা।

কাউখালী: রাঙামাটির কাউখালীতে ইউপিডিএফভূক্ত তিন গণসংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাউখালী উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কাউখালী উপজেলা সভাপতি থুইনুমং মারমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক নির্ণয় চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাউখালী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক দীপায়ন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পদাক ইসা চাকমা। সমাবেশে সঞ্চালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাউখালী উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ চাকমা।

পানছড়ি(খাগড়াছড়ি): খাগড়াছড়ির পানছড়িতে দুপুর ১২টায় ৪নং লতিবান ইউনিয়ন এলাকায় বান্দরবানের লামায় রেংয়েন কার্বারী পাড়াবাসীদের কলাবাগান ধ্বংস ও স্কুল নির্মাণে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে এবং বেদখলকৃত ভুমি ফেরত দান, সেটলারদের সমতলে পুর্নবাসন, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুুদের নিজ জমিতে পুর্নবাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ভূমি বেদখল বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ইউপিডএফ’র পানছড়ি ইউনিটের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ইউপিডিএফ পানছড়ি ইউনিটের সংগঠক সম্রাট চাকমা’র সভাপতিত্বে ও শংকর চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক পিংকু চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর পানছড়ি উপজেলা সভাপতি তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা, ৪নং লতিবান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ভূমিধর রোয়াজা ও সাবেক মেম্বার সাকেন্দু চাকমা প্রমুখ।

অপরদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইউপিডিএফের স্থানীয় ইউনিটের উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে হাতে লেখা পোস্টারিং করা হয়েছে। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাননো হয়।