বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের মৃত্যু

প্রতি বছরই ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করতেন পরিবারের সঙ্গে। এ বছরের সেপ্টেম্বরেও ১১৪তম জন্মদিনটা পালন করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেটা আর হলো না। তার আগেই চলে যেতে হলো তাকে।

১১৩ বছর বয়সেই ওপারে পাড়ি জমালেন বিশ্বের বয়স্কতম ব্যক্তি ইসরায়েল ক্রিস্টাল। শনিবার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালেতে বিশ্বের বয়স্কতম পুরুষ হিসাবে গিনেজ বুকে ক্রিস্টালের নাম উঠেছিল।

ইসরায়েলের নাগরিক ১৯০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডে জন্মেছিলেন ক্রিস্টাল। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিনিয়ে সুখের জীবন ছিল তার। সবার মধ্যমণি হয়েছিলেন ক্রিস্টাল।

ইহুদি ধর্মাবলম্বী ক্রিস্টাল প্রতি দিন সকালে উঠে নিয়মমাফিক প্রার্থনা করতেন। নিজের ১শ বছর বয়স পর্যন্ত এই নিষ্ঠায় কোনও ছেদ পড়েনি। তেমনটাই জানিয়েছেন ক্রিস্টালের মেয়ে শুলা কোপারস্টোচ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ক্রিস্টাল পোল্যান্ডের লোজে চলে আসেন। সেখানে পারিবারিক ব্যবসায় হাত লাগান। বিয়ে করেন। তার দুই সন্তানও হয়। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সময়টা ভালই যাচ্ছিল ক্রিস্টালের।

তার জীবনে দুঃসময় নেমে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। নাৎসিদের দখলে চলে যায় পোল্যান্ড। সে সময় ক্রিস্টালকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নাৎসিদের কুখ্যাত ক্যাম্প অসউইজ-বিরকেনাওতে। এই সময়ের মধ্যেই তার সন্তান ও স্ত্রীর মৃত্যু হয়। সম্পূর্ণ একাকী হয়ে পড়েন তিনি।

যুদ্ধ শেষে যখন ক্যাম্প থেকে ছাড়া পান, তখন ক্রিস্টাল প্রায় শীর্ণকায়। ওজন কমে ৩৭ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। এখানেও দমে যাননি তিনি। নিজের বাঁচার রসদ খুঁজতে পাড়ি দেন ইসরায়েলে। সেখানে গিয়ে একটি মিষ্টির দোকান খোলেন। ফের বিয়েও করেন। সেই স্ত্রীরও ঘরে দু’সন্তানের জন্ম হয়েছে।

সেই সংসার আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে। ৯ নাতি-নাতনি এবং ৩২ জন পৌত্রী ও পপৌত্রীর মাঝে দিব্যি কাটাচ্ছিলেন ক্রিস্টাল। প্রতি বছরই ঘটা করে তার জন্মদিন পালন করা হতো। কিন্তু এবারের জন্মদিনের এক মাস আগেই মারা গেলেন বিশ্বের এই বয়স্কতম ব্যক্তি।